এবছর বইমেলা হচ্ছে ২৮ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে জায়গা সংকোচের জন্য নতুন কোনও পাবলিশার্সদের স্টল দেওয়া যায়নি বলে জানাল বইমেলা কর্তৃপক্ষ। এবছরের ‘থিম কান্ট্রি’ জার্মানি। জার্মানির পাশাপাশি গ্রেট বিটেন, আমেরিকা, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া–সহ একাধিক দেশ অংশ নিচ্ছে। রাজ্য প্রকাশনা সংস্থাগুলোর মধ্যে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাত অংশ নিচ্ছে। সাংবাদিক বৈঠক করায় সময়ে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন বইসেলার ও পাবলিশার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে দেখা যায়নি তাঁকে। এদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই অশান্ত বাংলাদেশ। এবার তারই আঁচ সম্ভবত পড়ছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। যে কারণে এবারের মেলায় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন থাকা ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছে। সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তার উপর বিষয়টি নির্ভরশীল বলে জানিয়েছে পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ড।
বইমেলার আয়োজন নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি জানান, এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি জার্মানি। ৪৮ বছরের মেলার ইতিহাসে প্রথমবার। প্রতিবছরের মতো অংশগ্রহণ করছে গ্রেট ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ। কিন্তু এই তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের। যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি বলেন, ‘উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে আমরা সরকারের মুখাপেক্ষী। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে পদক্ষেপ করা হবে।’ এদিকে প্রতিবার সে দেশের পাবলিশার্সরা কলকাতা বইমেলায় প্যাভিলিয়ন করার জন্য আবেদন করতেন। তারপর কেন্দ্রীয় অনুমতি সাপেক্ষে সেই ছাড়পত্র দিত বইমেলা কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম। শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হওয়ার পর থেকেই সে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তুঙ্গে। ড. মহম্মদের ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে ঠিকই , কিন্তু অশান্তিতে লাগাম পরানো যায়নি। উলটে সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার বেড়েছে বলে অভিযোগ। এদিকে সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, যা নিয়ে জামাত–বিনএপির মতো দলগুলি সুর চড়াতে শুরু করেছে। ভারত–বিদ্বেষ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে তারা এদেশের বইমেলায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন কি না তা স্পষ্ট নয়। আবার আবেদন করে থাকলে কেন্দ্র ছাড়পত্র দিয়েছে কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা জারি রয়েছে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশে অত্যাচারিত সংখ্যালঘুরা। পরিস্থিতি বদলের জন্য ভারত বারবার আবেদন জানালেও কোনও বদল আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে তারা কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণের আবেদন করলে, এ দেশের সরকার সে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত। আবার দেশের অন্দরেও বাংলাদেশি পাবলিশার্সদের ভারত প্রীতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হত। তাই এবার হয়তো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ছাপার অক্ষরে দেখা মিলবে না হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল, জাহিদ হুসেনদের।