ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলাদেশি হিসাবে আটকে রয়েছেন নদিয়ার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। কৃষ্ণনগর লোকসভার অন্তর্গত কালীগঞ্জের পানিঘাটা গ্রামপঞ্চায়েতের মির্জাপুরের এই ২৩ জন বাঙালি শ্রমিক ওড়িশায় কাজে যান। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে রযেছে বৈধ কাগজপত্র। অথচ এরপরও বেআইনি ভাবে তাঁদের ঝাড়সুগুদায় ওরিয়েন্ট থানার পুলিশ আটকে রেখেছে বলে জানা যাচ্ছে। একইসঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, ওড়িশায় তাঁরা যেখানে কাজ করেন, সেখানে পুলিশ তাঁদের কাছে আধার কার্ড দেখতে চায়। আধার কার্ড দেখাতে না পারায় তাঁদেরকে পুলিশ আটক করে রাখে বলে দাবি পরিবারের। তারা পরিবারকে ফোন করে জানান। তাঁদের পরিবার বাড়ি থেকে আধার কার্ড ছবি তুলে পাঠায়। এরপরও এখনও পর্যন্ত তারা আটকে রয়েছেন ঝাড়সুগুদায়।
এদিকে এই ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে বিধানসভায় ইতিমধ্যেই সরব হতে দেখা গিয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এবার এই ইস্যুতে সুর চড়ালেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিদ্ধ করে এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পোস্ট করে মহুয়া অভিযোগ করেন, ‘নদিয়ার ২৩ জন শ্রমিককে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে ওড়িশা পুলিশ। সঙ্গে মহুয়া এও বলেন, ‘শতাধিক বাঙালি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৩ জন আমার এলাকার। হেনস্তার শিকার ওই শ্রমিকদের কাছে আধার থেকে ভোটার–সহ সমস্ত তথ্য রয়েছে। এরপরও তাঁদের হেনস্তা করা হচ্ছে।’ আর সেই কারণেই তাঁদের অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানান কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে তিনি বিজেপিকে বিঁধে বলেন, ‘নবীন পট্টনায়কের ২৪ বছরের শাসনকালে এই ধরনের অভিযোগ ওঠেনি। পড়শি রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই রকম হচ্ছে। একইসঙ্গে মহুয়াকে হুঁশিয়ারি দিতেও শোনা যায় শ্রমিকদের ছাড়া না হলে তিনি নিতে পারেন আইনি পদক্ষেপও।’ এরই রেশ ধরে তৃণমূল সাংসদ এও বলেন, ‘ নদিয়ার এসপি ইতিমধ্যেই ঝাড়সুগুদার এসপির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের তরফে জানানো হয়েছে, কাগজপত্রে কিছু ক্রটির কারণে এই আটক। এখানেই মহুয়ার বক্তব্য, ‘২৩ জনেরই বৈধ নথি রয়েছে। আধার কার্ড–সহ যা যা নথি কাজ করতে গেলে সঙ্গে থাকা দরকার, ওই শ্রমিকদের কাছে সবই রয়েছে। এ দেশের প্রতিটা নাগরিকের অধিকার রয়েছে, দেশের অন্য রাজ্যে যাওয়ার। তা বসবাসের জন্য হোক বা পেটের তাগিদে।’ শুধু তাই নয়, একেবারে হুঁশিয়ারির সুরে জানান, ‘’ভাববেন না এই শ্রমিকদের হয়ে লড়াই করার কেউ নেই। যদি তাঁদের অবিলম্বে ছাড়া না হয়, তাহলে আদালতের দ্বারস্থ হব।’
এরই প্রেক্ষিতে আইজি সম্বলপুর হিমাংশ কুমার লাল জানান, ঝাড়সুগুদায় ব্যক্তিদের আটক হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ যে তৈরি হয়েছে তা আমরা বুঝতে পারছি। তবে এটাও ঠিক যে, জাতীয় স্বার্থ এবং নিরাপত্তা রক্ষার খাতিরে এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করা সম্ভব নয়। যাদের সম্পর্কে তদন্ত চলছে, তাদের কাছে বৈধ বাসস্থান বা নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই, তাই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে একটি সুষ্ঠু যাচাই প্রক্রিয়া প্রয়োজন।
খুব স্পষ্ট ভাবে বললে, জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে এই পদক্ষেপ। যাচাইযোগ্য নথিপত্র না থাকলে,ব্যক্তিরা ভারতীয় না বিদেশি তা নিশ্চিত করতে রেকর্ড পরীক্ষা করা জরুরি। এই প্রক্রিয়া আমাদের সীমান্ত রক্ষা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে তিনি এও জানান, এই ব্যক্তিদের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে যেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য, পানীয়, পরিচ্ছন্নতা এবং চিকিৎসা পরিষেবারও ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি এ আশ্বাসও দিয়েছেন যে, বরিষ্ঠ আধিকারিকদের নেতৃত্বে যৌথ তদন্ত দলের মাধ্যমে যাচাই প্রক্রিয়া অত্যন্ত যত্নসহকারেই করা হচ্ছে যাতে কোনও ভারতীয় নাগরিককে ভুলক্রমে আটক বা হয়রানি করা না হয়। ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার রক্ষা এবং প্রক্রিয়ার সততা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে ওড়িশার ওই পুলিশ কর্তা এও জানান, এই প্রক্রিয়াটি কোনও সম্প্রদায় বা অঞ্চলের বিরুদ্ধে নয়, এটি আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই করা হচ্ছে।আর যাঁদের বৈধ নথিপত্র রয়েছে তাঁরা ইতিমধ্যেই তাঁদের নিজের জায়াগায় ফিরে যাচ্ছেন বা ফেরার পথে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এ অনুরোধও করেন, জনসাধারণকে এ ব্যাপারে কোনও ভ্রান্ত ধারনা পোষণ না করতে বা অনুমান না করতে। এর পাশাপাশি প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস রাখারও অনুরোধ জানান ওড়িশার ওই পুলিশকর্তা। সঙ্গে এও বলেন, ধৈর্য রাখতে যাতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।