২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ হাইকোর্টের

এসএসসি মামলায় ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। সোমা দাস ছাড়া সকলের প্যানেল বাতিল। এসএসসি মামলায় সোমবার এমনই নির্দেশ দিতে দেখা গেল বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চকে। একইসঙ্গে এও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সুদ সমেত  টাকা ফেরাতে হবে বেআইনিভাবে চাকরি প্রাপকদের। যাঁরা এত বছর বেতন পেয়েছেন কিন্তু চাকরি পেয়েছেন বেআইনি পথে তাঁদের এই টাকা ফেরাতে হবে চার সপ্তাহের মধ্যে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং একই বছরে স্কুলে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় এদিনের এই রায়। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৬৪০। তবে নিয়োগ করা হয়েছিল ১ হাজার ১১৩ জনকে। এর জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়। সোমবার সেই যাবতীয় পদ মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি বসাক এও নির্দেশ দেন, ‘ এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের ফেরত দিতে হবে বেতন।’ যাঁরা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবে। সিবিআই তদন্ত চলবে। বেআইনিভাবে যাঁরা সুপার নিউমেরিক পোস্ট করে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।

প্রসঙ্গত, এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম দশম ও একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ সংক্রান্ত শুনানি চলছিল এতদিন। সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত চাকরি প্রাপকরা মামলা করলে মামলা পাঠানো হয় হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে। বিতর্কিত চাকরি প্রাপকদের বিভিন্ন আইনজীবীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলাই সুপ্রিম কোর্ট হয়ে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে আসে। দীর্ঘ সওয়াল জবাব শেষে সোমবার গোটা প্যানেলই বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত। একইসঙ্গে আদালত এও জানায়, ১৫ দিনের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কীভাবে এই চাকরি দেওয়া হবে সেই প্রসঙ্গে  আদালত এও জানায়, ২০১৬ সালে যতজন পরীক্ষা দিয়েছিল তাদের ওএমআর শিট আবারও মূল্যায়ণ করা হবে এবার। সেখান থেকে বেছে নেওয়া হবে যোগ্যদের। এদিকে মাইনে ফেরানোর প্রসঙ্গে ডিএমকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই প্যানেলের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ সকলকে মাইনে ফেরাতে হবে।

এদিকে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানানো হয় এসএসসির তরফ থেকে। এই প্রসঙ্গে এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের প্রশ্ন, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেআইনি পথে চাকরি পাওয়া পাঁচ হাজার জনের তথ্য ছিল। কিন্তু, তার জন্য বাকি ১৯ হাজার জনের চাকরি কেন বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হল তা নিয়েও। একইসঙ্গে এসএসসি-র চেয়ারম্যান এও বলেন, ‘আমার সুপার নিউমেরারি পোস্টে যাঁদের নিয়ে তদন্ত তাঁদের একজনকেও সুপারিশ করা হয়নি। এক্ষেত্রে ফিজিক্যাল এডুকেশন এবং ওয়ার্ক এডুকেশন, যা তদন্তের আওতাধীন নয়, তাদের মধ্যে ১২৮০ জনকে সুপারিশ করা হয়েছিল।’

একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘ওএমআর সংক্রান্ত অভিযোগ, র‍্যাঙ্ক জাম্পিংয়ের অভিযোগ আমরা আলাদা করে মহামান্য আদালতকে জানিয়েছি। ওএমআর শিট -এর পুর্নমূল্যায়ন করার বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়েছি কিনা আমি জানি না। শুনানি চলাকালীন মহামান্য আদালত কখনও কখনও বলেছে আমরা করতে পারব কিনা। আমাদের কাছে সিবিআই-এর কাছ থেকে হার্ড ডিস্ক মারফত এসেছে তা রয়েছে। বাকি যে কিছু নেই, তা সকলের জানা।’ সঙ্গে সিদ্ধার্থর এও জানান, ‘প্রায় ৩০০ পাতার রায়। বহু পয়েন্ট তার মধ্যে রয়েছে। এদিন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি বিচারপতি পড়ে শোনান। তা আইনজীবীরা শুনেছেন। তার উপরে ভিত্তি করে বলছি।’ তবে এদিনের হাইকোর্টের এই রায়ের জেরে স্বাভাবিকভাবেই অনেকটাই স্বস্তিতে চাকরিহারারা। এখন দেখার সর্বোচ্চ আদালত এই প্রসঙ্গে ঠিক কী নির্দেশ দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − eight =