টলিউড-বলিউডে করবেন অভিনয়, এ স্বপ্ন অনেকেরই। আর এই স্বপ্নকে কাজে লাগিয়ে চলছিল প্রতারণা। লোভ দেখানো হচ্ছিল সরাসরি প্রোডাকশন হাউস থেকেই মিলবে অভিনয় করার ডাক। আর এই ভাবেই উঠতি তরুণ-তরুণীদের ফাঁদে ফেলা হত। এরপর ধীরে ধীরে হাতিয়ে নেওয়া হতো লক্ষ লক্ষ টাকা। সূত্রে খবর, এই লোভে পা দিয়েছিলেন ১০০ এর বেশি তরুণ তরুণী। আর তাদের কাছে থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। আর এই অভিযোগ সামনে আসতেই তদন্তে নাম নেতাজিনগর থানা। অবশেষে পাকাড়াও করা হয় এই চক্রের পাণ্ডাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, দলের পাণ্ডা আদতে এক রূপান্তরকামী। নাম হেনা।
তদন্তে নেমে নেতাজি নগর থানার আধিকারিকেরা জানতে পারেন, নেতাজিনগর এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে অফিস ভাড়া নিয়ে চালানো হচ্ছিল এই অভিনব প্রতারণার কারবার। প্রতারণার কৌশলেও কোনও ত্রুটি রাখেনি হেনা। কারণ, প্রথমেই নানা জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালানো হতো। এই বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট লেখা থাকতো, যে একটি বড় প্রোডাকশন হাউস নতুন সিরিয়াল ও সিনেমার জন্য নতুন মুখ খুঁজছে। সঙ্গে এও জানানো হতো, নামী পরিচালকরা এখানে কাজ করছেন, বড় বাজেটের প্রোজেক্ট, আর তাতেই দরকার নতুন মুখ। সঙ্গে এও জানানো হতো বিশেষ করে কিশোর, কিশোরী ও তরুণ প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। বিজ্ঞাপনে যোগাযোগের নম্বরও দেওয়া থাকত। এরপর আগ্রহীরা ফোন করে যোগাযোগ করলে, একে একে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হতো। চলত ফটোশুট, অ্যাঙ্গেল টেস্ট। চলতো একাধিক ধাপে অডিশনও। অর্থাৎ ঠিক যেমনটি একটি প্রোডাকশন হাউসের থেকে করা হয় ঠিক তেমনই। কোথাও কোনও সন্দেহের অবকাশ ছিল না। উঠতিদের মধ্যে এই ভরসা ও বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য মাঝে মাঝে নামী প্রযোজক বা পরিচিত অভিনেতাদেরও হাজির করা হতো এই অফিসেই। তাঁরা শুধু আসতেন এমনই নয়, উপযাচক হয়ে হবু তারকাদের উৎসাহ দিতেন। ফলে সমগ্র ঘটনায় বিন্দুমাত্র ন্দেহ করেননি কেউই। এদিকে তলায় তলায় চলতে থাকে প্রতারণার জাল বিস্তার। অভিযোগ, অফিস থেকে বলা হত কাজ পেতে হলে কিছু খরচা আছে। এই যুক্তিতে চাওয়া হতো কয়েক লক্ষ টাকা। কাজ পাওয়ার লোভে কেউ ৫ লক্ষ, কেউ বা ১০ লক্ষ পর্যন্ত দিয়ে দেন। কারণ, রুপোলি পর্দায় অভিনয় করার স্বপ্ন তখন তাঁদের চোখে। এই টাকা দেওয়ার পরই শুরু হতো আসল খেলা। কাজ দেওয়ার নামে চলতো টালবাহানা। কাউকে কাজ দেওয়া হয়েছে এমনও নয়। এরই মাঝে ফোন বন্ধ হয়হেনার। এমনকী একেবারে ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যায় অফিসও। তখনই তরুণ তরুণীরা বুঝতে পারেন তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন।
এই ঘটনায় নেতাজি নগর থানার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথমে ৫৮ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ে। পরে তদন্তে নেমে প্রতারিতের সংখ্যা ছাড়ায় একশো। সমানুপাতে প্রতারণার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০ কোটি টাকায়। তদন্তে নেমে এও জানা গেছে, শুধু কলকাতাই নয়, কলকাতার উপকণ্ঠ, শহরতলি ও জেলার মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেছে হেনা। অবশেষে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত হেনাকে গ্রেপ্তারও করেছ। পাশাপাশি এও খতিয়ে দেখা হচ্ছে, আরও কারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত তাও।