করোনার সাব ভ্য়ারিয়্যান্টের দাপটে আক্রান্ত বাংলা ৩৬ জন

জয়ন্ত ঘোষ

 

করোনার দাপট কেটে গেলেও কপালে ভাঁজ ফেলছে তার সাব ভ্য়ারিয়্যান্টরা। করোনার সাব ভ্যারিয়ান্টের মধ্যে জেএন.১  দাপট বেশ সমস্যায় ফেলেছিল। সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, ইউকে, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজি়ল্যান্ডের মতো বেশ কয়েকটি দেশে জেএন.১-কে সরিয়ে সংক্রমণের বাজারে মাতা চাড়া দেয় ‘ফ্লার্ট’ গোত্রের উপপ্রজাতি। ফ্লার্ট গোত্রের মধ্যে রয়েছে ওমিক্রনের চারটি মিউটেশন- এফ, এল এবং আর, টি। তাকেই সংক্ষেপে ফ্লার্ট বলা হয়। এদিকে নভেল করোনা ভাইরাস কী ভাবে নিরন্তর মিউটেশনের পর রূপ বদলে নতুন নতুন ভ্যারিয়্যান্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে, তার উপর নজরদারির জন্য দেশের ৬৭টি জেনেটিক ল্যাব নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘ইনসাকগ’। তারা জানিয়েছিল, প্রথমে মহারাষ্ট্র এবং তারপর কর্নাটকে খোঁজ মিলেছে কেপি.২-এর।
সম্প্রতি সেই সাব-ভ্যারিয়্যান্টের দেখা মিলেছে এ দেশেও। বিশেষত এরা বেশ সক্রিয়া হয়ে উঠেছে বাংলায়। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে যে পরিসংখ্যান মিলছে তাতে দেশের যে ১২টি রাজ্যে ফ্লার্টের অন্যতম কেপি.২ ভ্যারিয়েন্ট মিলেছে, তার মধ্যে মহারাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে বঙ্গ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, ফ্লার্টের দু’ধরনের ফ্লার্ট ভ্যারিয়্যান্ট রয়েছে। একটি কেপি.২ উপপ্রজাতি এবং অন্যটি কেপি.১.১ সাব-ভ্যারিয়্যান্টটি। এর মধ্যে প্রথমটিই ছড়াচ্ছে বেশি। সম্প্রতি কেপি.২ সাব-ভ্যারিয়্যান্টের ভারতে আগমনের কথা জানিয়েছে ইন্ডিয়ান সার্সকোভ-২ জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম (ইনসাকগ)।

এবার সেই ইনসাকগ-ই জানাচ্ছে, সারা দেশের ২৮৬ জনের মধ্যে এ রাজ্যের অন্তত ৩৬ জন কোভিড আক্রান্ত করোনার এই নয়া উপ-প্রজাতিতে সংক্রমিত। সবচেয়ে বেশি কেপি.২ ধরা পড়েছে মহারাষ্ট্রে (১৪৬)। তার পরেই রয়েছে বাংলা। এ ছাড়া রয়েছে গুজরাত (২৩), রাজস্থান (২১), ওডিশা (১৭), উত্তরাখণ্ড (১৬), গোয়া (১২), উত্তরপ্রদেশ (৮), হরিয়ানা (৩), কর্নাটক (২) এবং দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশ (১টি করে)। গত দেড়-দু’ মাসে যে সব নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল, তা বিশ্লেষণ করেই এই ফল জানা গিয়েছে। ইনসাকগের অধীন কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সে পাঠানো হয়েছিল এ রাজ্যের নমুনাগুলি।

তবে নতুন এই প্রজাতি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনের যে উপসর্গ এতদিন দেখা যাচ্ছিল, তার থেকে আলাদা নয় কেপি.২-এর উপসর্গ। গলা খুসখুস, কাশি, ক্লান্তি, নাক দিয়ে কাঁচা জল, মাথা ও মাংসপেশিতে ব্যথা, জ্বর অথবা জ্বর জ্বর ভাব এবং শীত লাগা। তবে কোনও উপসর্গই মারাত্মক নয়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা এও জানাচ্ছেন, ফ্লার্টও আদতে ওমিক্রনেরই এক তুতো-ভাই। তাই চিন্তার কিছু নেই। প্রকৃতিতে ভাইরাস ক্রমাগত মিউটেশন করতে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। আগামী দিনেও এ রকম নতুন নতুন রূপ মাঝে মাঝেই আরও দেখতে পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =

preload imagepreload image