খাস কলকাতার প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি চালনার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার চার। যদিও মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের মধ্যে রয়েছে মূল অভিযুক্তের এক আত্মীয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ডের নাগাল পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার গভীর রাতে পার্ক স্ট্রিট লাগোয়া মির্জা গালিব স্ট্রিটে দুপক্ষের গুলিযুদ্ধে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। জখম হন একজন। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে সোনু নামে একজন সন্দেহভাজনের হদিশ পায় পুলিশ। তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে কয়েকজনকে আটক করা হয়। এরপর শনিবার রাতে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার রাতে যে তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে, তাঁরা হলেন ৩১ বছরের আসিফ আহমেদ, কলিন স্ট্রিটের বাসিন্দা। ৪১ বছরের ফারুক খান, মির্জা গালিব স্ট্রিটের বাসিন্দা এবং ২৪ বছরের আফসার আলি, মির্জা গালিব স্ট্রিটের বাসিন্দা। সিসিটিভিতে এঁদের গুলি চালাতে দেখা না গেলেও ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁরা যুক্ত বলে অভিযোগ। এরপর রবিবার সকালে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন আরও এক জন। রবিবার পুলিশ সাব্বির নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকেও গুলি চালাতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। মির্জা গালিব স্ট্রিটের এই গুলিকাণ্ডে মূল অভিযুক্তের নাম সোনা। যিনি গুলি খেয়েছেন, তিনি সোনার নামেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু তাঁকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। তাঁর খোঁজ চলছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত সাব্বির মূল অভিযুক্তের শ্যালক। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সোনার খোঁজ পাওয়া যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধেয় মূল অভিযুক্ত সোনুর সঙ্গে রাকিব নামে এক যুবকের বচসা হয়। তা তখনকার মতো মিটে গেলেও গভীর রাতে গাড়ি রাখতে আসা সোনুর উপর রাকিবের দল চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পার্ক স্ট্রিট লাগোয়া ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দুপক্ষের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বচসাও চলে। অভিযোগ, এই বচসার মাঝে আচমকাই সোনু গুলি চালাতে শুরু করে। কমপক্ষে তিন রাউন্ড গুলি করা হয় বলেই জানা গেছে। এদিকে এই গুলি চালনার ঘটনায় জখম হয় রাকিব। তাঁর ডান পায়ে গুলি লাগে। দীর্ঘক্ষণ ওই অবস্থায় পড়ে থাকার পর তাঁকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই সোনা পলাতক। তদন্তে নেমে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ জানতে পারে, সোনা কুখ্যাত সমাজবিরোধী। তার নামে আগেও বহু অপরাধমূলক কাজকর্মের রেকর্ড আছে। গ্রেফতারও হয়েছে। পরে ছাড়া পেয়ে ফের তোলাবাজির মতো বেআইনি কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে। তা নিয়েই সম্ভবত তার সঙ্গে রাকিবের বচসা এবং সংঘর্ষ। পুলিশ সূত্রে আরও খবর, ধৃতদের মধ্যে সাব্বির নামে ব্যক্তি সম্পর্কে সোনার শ্যালক। তার সূত্র ধরেই মূল পাণ্ডার হদিশ পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
কে এই সোনাঃ
পুলিশ সূত্রে খবর, সোনা শহরের কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮৬ সালে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয় ফইউদ্দিন ওরফে সোনার। ওয়েলেসলি সেকেন্ড লেনের কুখ্যাত গ্যাংস্টার আখতার মেহমুদের হাত ধরে অন্ধকার জগতে পা দেয় সোনা। ওই একই সময়ে রশিদ আলম ওরফে গব্বরও ওই দলেই যোগ দেয়। পরে গব্বর এবং সোনা মিলে গ্যাং তৈরি করে।
এক সময় কলকাতার অপরাধ দুনিয়া নাকি চলত গব্বরের দাপট আর সোনার বুদ্ধি নিয়ে। এই দু’জন গোটা মধ্য কলকাতা, দক্ষিণ এবং পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াত। খাদিম কর্তা পার্থ রায় বর্মনের অপহরণ মামলাতেও ‘ওয়ান্টেড’ হিসেবে নাম ছিল সোনার। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই সোনাই খাদিম কর্তার গতিবিধি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছিল। এরপর ১৯৯৭ এবং ১৯৯৮ সালে পর পর দু’বার গ্রেফতার হয় সোনা। বাদশা এবং সাদিক খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে। জানা যায়, এরপর নাকি সোনা গব্বরের দল ছেড়ে তিলজলার চুন্নু মিঞার সঙ্গে যোগ দেয়। তোলাবাজি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পাশাপাশি ড্রাগ কারবারেও নাম রয়েছে সোনার। পরে মধ্য কলকাতা থেকে তিলজলার সাপগাছি লেনে নিজের ডেরা সরিয়ে নেয় সোনা। সাম্প্রতিককালে সে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশের অনুমান, মাদকের ব্যবসা এবং রিয়েল এস্টেটের তোলাবাজি এখনও চালাচ্ছে সোনা। মাঝে সে বেআইনি কল সেন্টার ব্যবসা থেকেও মোটা তোলা আদায় করেছে বলে খবর। পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, সোনার আদি বাড়ি বিহারের দ্বারভাঙায়, শ্বশুরবাড়ি সাসারামে। বছর ২৫ আগেই সোনার সম্পত্তি ছিল কোটি টাকার বেশি। কলকাতার অপরাধ জগতে তাকে ‘কনভেন্টে পড়া গ্যাংস্টার’ বলে চেনে অনেকেই। ইদানিংকালে শাসক দলের পাড়া স্তরের মিটিং মিছিলেও দেখা গিয়েছে তাকে।