৪ জুলাই স্বামী বিবেকানন্দের প্রয়াণ দিবস। ১৯০২ সালে ৪ জুলাই মহাপ্রয়াণ হয়েছিল স্বামীজির। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৯ বছর পাঁচ মাস ও ২৪ দিন। মৃত্যুকেও খুব শান্তভাবে বরণ করেছিলেন স্বামীজি। তাঁর শিষ্যরা বলেন, স্বামীজি একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। সেই উদ্দেশ্য বা কাজ শেষ হওয়ার পরই তিনি মহাপ্রস্থান করেন। শোনা যায়, তিনি নাকি ভক্তদের আগে থেকেই বলেছিলেন, আমি ৪০ বছরের বেশি বাঁচব না।
এখানে একটা কথা বলতেই হয়, ১৯০০ সালে তিনি সিস্টার নিবেদিতাকে লেখা এক চিঠিতে বলেছিলেন, এবার আমি বিশ্রাম করতে চাই। অনেক কাজ করেছি। তবে কর্ম আমাকে ক্রমাগত নিজের দিকে টানছে। আমি জানি কখন ও কোথায় আমার বিশ্রাম। এরপরের চিঠি বিবেকানন্দ তাঁর পরিচিত মেরি হেলকে লিখলেন ২৭ অগাস্ট ১৯০১-এ। সেখানেলিখেছিলেন, এখন আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি। আন্দোলন কেমন চলছে, জানতে চাই না। সময়ে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমনো এবং শরীরের যত্ন নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করি না। বিদায় মেরি। আশা করি আমরা দুজনেই এই জীবনে কোথাও আবার দেখা করব। আর দেখা না হলেও তোমার এই ভাই সবসময় তোমাকে ভালবাসবে। এরপর ১৯০২ সালের শুরু থেকেই তিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করেছিলেন। খুব কম প্রশ্নের উত্তর দিতেন। তিনি রোমা রোঁলাকে বলেছিলেন, ৪০ বছরের বেশি বাঁচব না। মৃত্যুর দুমাস আগে তিনি তাঁর সমস্ত সন্ন্যাসী শিষ্যদের দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সবাইকে চিঠি লিখে অল্প সময়ের জন্য বেলুড় মঠে আসতে বলেন। তিনি অনেকবার বলতে থাকেন, মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি। এখন দেশ ও বিশ্বের খবর নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেব না। শেষের কদিন তিনিও অসুস্থতার কবলেও পড়েছিলেন।
এদিকে জনপ্রিয় লেখক শঙ্করের বই ‘দ্য মংক এজ ম্যান’-এ বলা হয়েছে যে তিনি ঘুম, লিভার, ডায়াবেটিস, কিডনি, মাইগ্রেন এবং হার্টের ৩১টি রোগে ভুগছিলেন। তখন ডায়াবেটিসের কার্যকর কোনো ওষুধ পাওয়া যেত না। যদিও রোগ থেকে মুক্তি পেতে তিনি নানা ধরনের প্রতিকার করেছিলেন। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ ছিল হার্ট অ্যাটাক।
তবে মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে তিনি তাঁর এক শিষ্যকে পঞ্জিকা আনার নির্দেশ দেন। তার পর মনোযোগ দিয়ে পঞ্জিকা দেখেন। যেন কোনো বিষয়েই কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাঁর মৃত্যুর পর গুরু ভাই ও শিষ্যরা ধারণা পেয়েছিলেন, তিনি তাঁর দেহত্যাগের তারিখ নিয়ে ভাবছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও মৃত্যুর আগে এমন পঞ্জিকা দেখেছিলেন। এরপর মহাপ্রস্থানের তিন দিন আগে তিনি প্রেমানন্দজিকে মঠের একটি বিশেষ স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, সেখানে তাঁর মৃতদেহ দাহ করা উচিত। এখন সেই জায়গাতেই বিবেকানন্দ মন্দির তৈরি করা হয়েছে।