পটনার হাসপাতালে গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্র খুনের ঘটনায় শনিবার রাতে আরও পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে বিহার এসটিএফ এবং কলকাতা পুলিশ এসটিএফ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজে একটি গাড়ি কলকাতা অভিমুখে আসতে দেখা গিয়েছিল। সেই গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে আনন্দপুর, ভাঙড়–সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিল পুলিশ। লোকেশন ট্র্যাক করে আনন্দপুরের একটি গেস্ট হাউস হাউসের সন্ধান পায় পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাছ থেকে ফোন পান গেস্ট হাউস মালকিন। সঙ্গে সঙ্গে গেস্ট হাউসে যান মহিলার স্বামী ও পুত্র। ততক্ষণে গোটা এলাকা ছেয়ে যায় সশস্ত্র পুলিশে।এরপর রাতে শুরু হয় অভিযান।
পুলিশি সূত্রে এও জানা গিয়েছে, শুক্রবার থেকে ওই গেস্ট হাউসের চারতলার একটি রুম ভাড়া করে সেখানেই গা ঢাকা দিয়েছিল দুষ্কৃতিরা। গেস্ট হাউসের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল তাদের বিহার রেজিস্ট্রেশনের গাড়িটি। যা এই অভিযানেও এসটিএফ–এর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আনন্দপুরে ধৃতদের নাম সচিন সিংহ, হরিশ কুমার, তৌসিফ এবং ইউনুস খান। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন এক মহিলাও। তাঁর নাম এখনও জানা যায়নি। এদিকে রাতে এই গ্রেফতারির সময় ওই পাঁচ জনের মধ্যে একজন স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে সে অসুস্থ পড়ে। পরে পুলিশ বাহিনী স্ট্রেচারে করে তাকে চার তলা থেকে নিচে নামিয়ে আনে।শেষমেশ শনিবার রাতে আনন্দপুরের গেস্ট হাউস থেকে পাঁচ জনকে আটক করা হয়। ফলে এই নিয়ে পটনা–কাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১।
এই ঘটনায় গেস্ট হাউসের মালকিন জানান, ওই পাঁচ জন শুক্রবার তাঁদের গেস্ট হাউসে উঠেছিলেন। রীতিমতো বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়েই ঘর নিয়েছিলেন তাঁরা। গেস্ট হাউসের তিন তলায় দু’টি ঘর দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। পাঁচ জনের মধ্যে ছিলেন এক মহিলাও। তবে সে সময় তাঁদের হাবভাব দেখে মোটেও বোঝা যায়নি, সদ্য খুন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। পাঁচ জনের দলটিকে সন্দেহজনক বলেও মনে হয়নি গেস্ট হাউসের কর্মীদের। আর এখানেই ওই গেস্ট হাউসের মালকিনের প্রশ্ন, তিনি কী করে বুঝবেন ? কাউকে বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়, কে অপরাধী আর কে অপরাধী নয়। আর তা বুঝতে পারলে তিনি ঘর দিতেনও না। পাশাপাশি তিনি এও জানান, ধৃতেরা সকলেই ঘর নেওয়ার সময় বৈধ নথিপত্র দেখিয়েছিলেন। তাঁদেরকে তিন তলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দু’টি ঘর দেওয়া হয়েছিল। এসি ঘরের ভাড়া ১,৫০০টাকা।সেই টাকাও মিটিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই সময় তাঁদের আচরণে কিছুই সন্দেহজনক বলে মনে হয়নি।
এদিকে এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা–৮টা নাগাদ বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় আসে। এর কিছু ক্ষণ পর একটি অ্যাম্বুলেন্সও আসে। উপর থেকে স্টেচারে শুইয়ে এক জনকে নামানো হয়। অবশ্য তিনি বেঁচে ছিলেন না মারা গিয়েছেন বোঝা যাচ্ছিল না। পুলিশ প্রায় ঘণ্টাখানেকের মতো ছিল। তার মধ্যেই গোটা ঘটনাটি ঘটে যায়।
উল্লেখ্য, শনিবার সকালেই নিউটাউনের একটি আবাসন থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে বিহার পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। পুরুলিয়ার জেলে বন্দি থাকা শেরুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ওই পাঁচ জনের হদিশ পায় তারা। পুলিশের অনুমান, শেরুর ‘সুপারিতেই’ মেডিক্যাল প্যারোলে থাকা চন্দন মিশ্রকে খুন করেছে এই অভিযুক্তরা।