ফিজিশিয়ানস কমিটি ফর রেসপনসিবল মেডিসিন (PCRM)-এর ইন্টারনাল মেডিসিন চিকিৎসক, স্বীকৃত পুষ্টিবিদ এবং ফিটনেস বিশেষজ্ঞ ডঃ বণিতা রহমান কলকাতার লরেটো কলেজে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানান, ভারতীয় নারীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে তিনটি রোগ। যার মধ্যে রয়েছে স্তন ক্যানসার, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এবং থাইরয়েড। আর এই সূত্রেই এর চিকিৎসায়- উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য ও জীবনযাত্রার প্রভাব সম্পর্কেও আলোকপাত করেন ডঃ বণিতা রহমান।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, কলকাতায় স্তন ক্যানসারের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। শহরের মোট মহিলা ক্যানসার রোগীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ জরায়ু এবং স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত । অন্যদিকে, ভারতে প্রায় ২ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ মহিলার PCOS পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম রয়েছে। আর প্রায় ৪২ মিলিয়ন ভারতীয় থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে কিশোরীবেলা, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের সময় মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান তুলে ধরে ডঃ বণিতা রহমান বলেন, পুষ্টি কেবল একটি ফ্যাক্টর নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থতার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে, PCOS-এ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সঙ্গে এও জানান, “আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে শস্য, ফল ও সবজি সমৃদ্ধ উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, PCOS-এ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং থাইরয়েড কার্যকারিতা সমর্থন করে।” এরই রেশ ধরে তিনি এও জানান,”এই স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলায় মহিলাদের মধ্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
তার বক্তব্যে, ডঃ রহমান উদ্ভিদভিত্তিক পুষ্টির স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তুলে ধরেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম চর্বিযুক্ত উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি ২৩ শতাংশ কমে যায় এবং এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৭ শতাংশ কমে।
সঙ্গে এও জানান, শুধু খাদ্যাভ্যাসই নয়, তিনি সামগ্রিক জীবনধারাগত পরিবর্তনের গুরুত্বও তুলে ধরেন, যার মধ্যে নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও সঠিক ওজন বজায় রাখা অন্তর্ভুক্ত। লরেটো কলেজের এই সেশনে শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং উদ্ভিদভিত্তিক পুষ্টির বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবায় এর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে যে আলোচনা হয় তাতে অংশও নেন। ক্রমবর্ধমান গবেষণা উদ্ভিদভিত্তিক পুষ্টির শক্তি তুলে ধরার সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার সময় এসেছে। প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং পুষ্টিকে চিকিৎসা শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। লোরেটো কলেজের এই সেশনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং উদ্ভিদভিত্তিক পুষ্টির বিজ্ঞান ও এর স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োগ নিয়ে আলোচনাও করেন।
যখন গবেষণা ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর উদ্ভিদভিত্তিক পুষ্টির শক্তি তুলে ধরছে, সেখানে এখন সময় এসেছে স্বাস্থ্য সেবার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর। প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, এবং পুষ্টিকে চিকিৎসা শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে।