রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে এবার লড়াইটা সহজ নয়, প্রাক ভোট পরিস্থিতি বলছে সেই কথাই। ফলে উৎকণ্ঠা রয়েছে দুই শিবিরেই। এদিকে গত কয়েক বছরে রানাঘাটে নিজেদের ভিত শক্ত করেছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূলকে কার্যত দাঁত ফোটাতে দেয়নি পদ্ম শিবির। তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়াইটা দুই যুযুধান শিবিরের কাছেই যে সহজ নয় এমনটাই শোনা যাচ্ছে বিজেপি শিবিরে। এদিকে রানাগাটে এবার বিজেপির তরফ থেকে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা।
রানাঘাটের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, বিগত ২০০৯ এবং ১৪ সালের লোকসভায় ছড়ি ঘুরিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৮ সালের পর থেকে চিত্রটা পাল্টাতে থাকে। মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে ১৯- এ জগন্নাথ সরকারকে প্রার্থী করে বিজেপি।প্রায় আড়াই লাখ ভোটার ব্যবধানে কেন্দ্রটি জিতে আসেন জগন্নাথ সরকার। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। বিগত কয়েক বছরে এই কেন্দ্রেই তৈরি হয়েছে বিজেপির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। কারণ, কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে নাম জড়িয়ে পড়া, কখনও সমাজমাধ্যমে কুৎসা সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হয়েছে বিজেপির এই সাংসদকে। তাঁর বিরুদ্ধে সাংসদ এলাকায় পোস্টার, বিরোধী গোষ্ঠীর প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। যদিও, ২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁকে দাঁড় করানো হয়েছিল। জিতেও বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন জগন্নাথ।
তবে এবার ভাগ্যদেবী তাঁর সহায় হবেন কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে দলের মধ্যেই। জেলা বিজেপির একটি অংশ চাইছে, এই কেন্দ্র থেকে এবার চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারীকে প্রার্থী করা হোক। গত বিধানসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে জিতে এসেছেন মুকুটমণি।তরুণ চিকিৎসকের জেলায় জনপ্রিয়তা কম নয়। যদিও পালটা জগন্নাথ শিবিরের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগের কমতি নেই। কল্যাণী এইমসে অর্থের বিনিময়ে চাকরি করে দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ। কালি লেগেছে তাঁর রাজনৈতিক জীবনেও বলে দাবি একাংশের। এমত অবস্থায়, ফের নতুন কোনও মুখকে দাঁড় করাবে নির্বাচনে, তাই নিয়ে চলছে জল্পনা।
এই প্রসঙ্গে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক বিজেপি সভাপতি তথা বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের মত, ‘বিজেপিতে প্রার্থী নির্ধারণটা খুব উঁচু লেভেলের বিষয়। বিজেপির প্রার্থী নির্ধারণ করে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব। জগন্নাথ সরকারকে নিয়ে যদি এরকম কোন গুঞ্জন হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব, যিনি গতবার জয়ী প্রার্থী তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কাকে দল টিকিট দেবে সেটা বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব ঠিক করবে।’
এদিকে আবার গতবার তৃণমূল নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাসের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী রূপালী বিশ্বাসকে দাঁড় করিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আবেগের বশে তাঁকে দাঁড় করানো হলেও সেই চাল কাজে আসেনি। তবে এবার তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে এগিয়ে এসএসকেএম-এর প্রাক্তন ডেপুটি সুপার অতীন্দ্রনাথ মন্ডল। যিনি বর্তমানে কল্যাণী গান্ধি মেমোরিয়াল হাসপাতালের সুপার। চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারীর সম্মুখ সমরে তাঁকে দাঁড় করানোর ভাবনায় তৃণমূল। রয়েছে আরও কিছু নাম। যদিও এ বিষয়ে রানাঘাট সাংগঠনিক তৃণমূল জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন দলের সুপ্রিমো। তাই কে প্রার্থী হবে তা আগাম বলা অসম্ভব!’’ তবে এবার রানাঘাট কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধার করাই পাখির চোখ তৃণমূলের।