বিজেপিকে মসনদ থেকে সরানোর লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল ইন্ডি জোট। দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু সময় যতই এগিয়েছে, ততই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে এই জোটের মধ্যে ফাটলের ছবিটা। বিশেষত জোটের অন্যতম সদস্য তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেভাবে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, তাতে রাজনৈতিক মহলের অনুমান বাংলায় আসন ভাগাভাগি-র সম্ভাবনা আর নেই। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ একা লড়ার কথা বলেছেন মমতা। তবে কংগ্রেস এখনও আশাবাদী। শুক্রবার ফের কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, দরজা এখনও খোলা আছে। তারপরই তৃণমূল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করল আরও একবার। দলের অন্যতম মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়ে দিয়েছেন কী তাদের অবস্থান।
এদিকে শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জয়রাম রমেশ জানান, আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি এখনও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা চলছে। এই প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টি ও আম আদমি পার্টির উদাহরণও দিয়েছেন তিনি। ওই দুই দলের সঙ্গেই ইতিমধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়েছে কংগ্রেসের। তাই তৃণমূলের সঙ্গেও যে সব জট কেটে যাবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী কংগ্রেস নেতা।
তবে জয়রাম রমেশের এই বক্তব্যের পরই বার্তা দেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি জানিয়েছেন, ‘কয়েক সপ্তাহ আগে তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়েছেন যে বাংলার ৪২টি আসনে একাই লড়বে তৃণমূল। অসম ও মেঘালয়ের কয়েকটি আসনেও লড়াই করবে। এই অবস্থানেই এখনও অনড় রয়েছে দল।’ এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে আপাতত ৪২টি আসনে কোনওভাবেই সমঝোতা হবে না, ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য থেকে তা কার্যত স্পষ্ট। উল্লেখ্য, বাংলায় জোট না হওয়ার জন্য বামেদের দুষেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘আমি ইন্ডিয়া জোটের নামকরণ করেছিলাম। কিন্তু, বৈঠকে গিয়ে যোগ্য সম্মান পাই না।’ এদিকে আবার বঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তিনি তৃণমূল সুপ্রিমোকে তোপ দেগেছিলেন। পাশাপাশি বামেরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছিলেন।ফলে সবমিলিয়ে বাংলার ৪২টি আসনে ইন্ডিয়া জোট এখনও বিশ বাঁও জলে। এমনকী ডেরেক-কে এও বলতে শোনা গেছে ‘পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের জয়ী হওয়ার মতো আসন কই?’ এখানেই শেষ নয়, সঙ্গে এও জানান, কংগ্রেসের কোনও সিটে জয়ের আশা তিনি দূরবীন দিয়েও দেখতে পাচ্ছেন না। এদিকে আবার কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধি যখন ‘ভারত জোড় ন্যায় যাত্রা’ নিয়ে বাংলায় এসেছিলেন, তার আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। রাহুলের বঙ্গ সফরের কথা কেন তাঁকে জানানো হল না, কেন কংগ্রেস সৌজন্য দেখাল না, তা নিয়ে প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে কংগ্রেস সূত্রে খবর, মমতাকে ফোন করে ‘ভারত জোড় ন্যায় যাত্রা’য় যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
এদিকে শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, তিনি মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস চায়, বাংলায় সিপিএম-এর সঙ্গে আঁতাত করে কংগ্রেস ভোটে লড়ুক। অধীর চৌধুরীর এই মন্তব্য অত্যন্ত বার্তাবহ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গে আসন ভাগাভাগি প্রসঙ্গে আঙুল তুলেছিলেন বামেদের দিকেই। জোটে যোগ্য সম্মান না পাওয়ার জন্যও তাঁর নিশানাতে ছিলেন বামেরাই। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অধীরের এই মন্তব্যে স্পষ্ট বার্তা, তিনি দলীয় তরফে বামেদের হাত ধরে লোকসভাতে লড়াই করতেই বেশি আগ্রহী। এদিকে তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গ এবং জয়রাম রমেশের বক্তব্য প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, ‘জয়রাম রমেশ এই মন্তব্য কেন করছেন তা আমার জানা নেই। একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘এখন তৃণমূলের একটা অংশের মানুষ মনে করছেন যে এখন যদি ইন্ডিয়া জোটে না যায় তাহলে সংখ্যালঘু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিমুখ হবে। তৃণমূলের অপর অংশ মনে করছে এখনই যদি ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠতা বাড়াই তাহলে ইডি-সিবিআই তৎপর হবে। কোনটা বেশি বিপজ্জনক সেটা মাপতে তারা ব্যস্ত। এর পরেই আমরা বামেদের সঙ্গে লড়াই করব।’
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রথমবার ২০১৬ সালে বাম এবং কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনের জন্য হাতে হাত মেলায়। যদিও সেই বারও তৃণমূলের ফলাফলের উপর বিশেষ কোনও প্রভাব তারা ফেলতে পারেনি। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চা তৈরি হয়েছিল, যার অংশ ছিল বাম-কংগ্রেস। এখন দেখার লোকসভা নির্বাচনেও কি বঙ্গে বাম এবং কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়বে কি না।