জামিন পেলেন সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার

হাইকোর্টে জামিন পেলেন সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। মঙ্গলবার বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ নিরাপদ সর্দারের জামিনের আবেদন মঞ্জু করে। এরই পাশাপাশি বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘এই ধরনের বোকা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার শকিং।’ এদিকে আদালত সূত্রে খবর, নিরাপদর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে জানান, জামিনের দিনই গ্রেফতার করা হয় একজনকে। ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় নিরাপদ সর্দারকে। ১৭ দিন কেটে গিয়েছে। তিনি এখনও জেলে। এদিকে রাজ্যের তরফে আইনজীবী রুদ্রদীপ নন্দী বলেন, ‘প্রথম এফআইআরটি ওখানে অপরাধের জন্য। বিক্ষোভ সংগঠনে ভূমিকা রয়েছে ওনার। কিছু বক্তব্য রেখেছেন উনি।’ এরপরই বিচারপতি বসাক প্রশ্ন করেন, ‘এভাবে কি কাউকে গ্রেফতার করা যায়? একজন নাগরিককে এভাবে গ্রেফতার করার ব্যাখ্যা কী?’ একইসঙ্গে বিচারপতি জানতে চান, ‘যারা গ্রেফতার করল তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না? এত দিন জেলে থাকার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?’

এদিকে সিপিএমের নিরাপদ ২০১৬ সাল অবধি সন্দেশখালির বিধায়ক পদে থেকেছেন। শেখ শাহজাহান বা তাঁর শাগরেদদের জমি কাড়া নিয়ে তিনি সে সময় বিধানসভায় সরবও হন বলে সোমবারই দাবি করেন বসিরহাট কোর্ট চত্বরে। তবে নিরাপদর এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূল। কিন্তু সিপিএম বলছে, প্রশ্নের অবকাশই নেই। সেইকারণে নথি নিয়ে এবার তারা ময়দানে।

এদিকে বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। তিনি নথি দেখিয়ে দাবি করেন, নিরাপদ সর্দার বিধানসভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক এই প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর কাছে ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিধানসভার ছাপানো বইয়ের প্রতিটা ভলিউম আছে। নিরাপদর কথা শুনেই তাঁর মনে পড়ে, বহুবার নিরাপদ এ নিয়ে বলেছেন। এরপরই বইগুলি ঘাঁটতে থাকেন।

এদিকে এ নিয়ে সোমবারই ব্রাত্য বসু প্রশ্ন তোলেন, ‘বিধানসভায় কলিং অ্যাটেনশন বা দৃষ্টি আকর্ষণের  প্রস্তাব তো শুধু দাঁড়িয়েই বলা যায় না, লিখিতও করা যায়। লিখিত কোনও ডকুমেন্ট কি প্রাক্তন বিধায়ক আমাদের দেখাতে পারবেন? আমি নিশ্চিত এরকম কোনও দৃষ্টি আকর্ষণের প্রস্তাব বিধায়কের কাছ থেকে আসেনি।’

তবে সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লাগাতার এই কথা বলেছেন। অনেকের নাম করে বলেছেন। এমনকী নিরাপদ সর্দার এও বলেন, আপনারা যা করছেন ভবিষ্যৎ আপনাদের ক্ষমা করবে না। বিধানসভার অন্দরে নিরাপদ সন্দেশখালির প্রতিটি অত্যাচারের ঘটনা বলেছেন। তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে। কখনও মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘আমিও তো প্রশ্ন তুলেছিলাম ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলা হচ্ছে, নদীর পার্শ্ববর্তী চরের চরিত্র বদল হয়ে যাচ্ছে। চন্দ্রকান্ত সিনহা মন্ত্রী ছিলেন। তিনি উত্তর দিয়েছেন। সেটা তো রেকর্ডে আছে বিধানসভার।’ প্রসঙ্গত ২০১৪ সালে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় যান তিনি।

এদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, ‘যেটা স্বাভাবিক সেটাই হয়েছে। অপরাধীরা পুলিশের ঘেরাটোপে ঘুরে বেড়াবে। আর সত্যি কথা বলায় নিরাপদ সর্দারকে এতদিন অন্যায়ভাবে আটকে রেখে দিয়েছে। নিরাপদর বিরুদ্ধে দু’টো মামলা। একটা শিবু হাজরা করেছিল, অন্যটা ভানু মণ্ডল। দু’জনই মহিলাদের অভিযোগে অভিযুক্ত। তাঁদের সম্পর্কে সেখানকার মানুষ যা বলছেন, সকলেই শুনছে।’ নিরাপদকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এবার তার বিচার পেলেন বলেই মত সুজনের।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =