লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের জার্সিবদল কালিয়াগঞ্জের বিধায়কের

ফের জার্সিবদল কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়ের। একুশে তিনি লড়েছিলেন পদ্ম প্রতীকে, জয়ীও হয়েছিলেন। এরপর ২০২১, মাস সেপ্টেম্বর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে আসেন কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়। তাঁর আগমনে ঘাসফুলের তরফে বলা হয়েছিল, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন দেখেই তিনি তৃণমূলে এসেছেন। এই যোগদানের আগে অবশ্য সৌমেন রায় তৃণমূলেরই সদস্য ছিলেন। সেক্ষেত্রে তাঁর ঘরওয়াপসি একবার হয়েছে। এখন লোকসভা নির্বাচনের আগে এক ঘর থেকে ফের অন্য ঘরে তিনি। কিন্তু, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার ভোলবদল। তৃণমূল ছেড়ে ফের একবার বিজেপিতে যোগ দিলেন সৌমেন রায়। প্রথমে তৃণমূলের সদস্য ছিলেন তিনি। তবে কেন আবার তাঁর গেরুয়া শিবিরে প্রত্যাবর্তন তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

একুশে তৃণমূলে যোগদানের পর সৌমেন রায় বলেছিলেন, ‘আমার মন পড়েছিল তৃণমূলে। দিদি উত্তরবঙ্গের জন্য লড়াই করছেন। তাঁর এই উন্নয়ন যজ্ঞে অংশ নিতেই আমি তৃণমূলে যোগদান করেছি। যে সময়টা মাঝে ছিলাম না তা আমার ভুল। দিদির উন্নয়ন যজ্ঞে মিলিত হতে পারলে কৃতার্থ হব।’ কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁর ফের দলবদল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে উত্তরবঙ্গের লোকসভা আসনগুলির দিকে বিশেষ নজর গেরুয়া শিবিরের। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো ফলাফল হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। সেই জায়গা থেকে সৌমেন রায়ের গেরুয়া শিবিরের যোগদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, সৌমেন রায় একটা সময় মুকুল রায় অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর মুকুল রায় যখন বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন তখন বঙ্গ রাজনীতির অন্দরে রীতিমতো তোলপাড় পড়ে যায়। গেরুয়া শিবিরের নেতাদের কণ্ঠেই শোনা গিয়েছিল উলটো সুর। সেই সময় সৌমেন রায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

যাবতীয় জল্পনাকে স্বীকৃতি দিয়ে যোগদান করেছিলেন তৃণমূলে। বুধবার ফের একবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতার হাত ধরে তিনি প্রত্যাবর্তন করলেন পদ্ম শিবিরে। উল্লেখ্য, বিজেপি-র হয়ে জয়ী হয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেও বিধায়কপদ ছাড়েননি তিনি। এরপর বুধবার সল্টলেকের বিজেপি দফতরে দেখা যায় তাঁকে।

সৌমেন রায়ের এদিনের দলবদলের পর বুধবার বিজেপি ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই এই প্রত্যাবর্তনের কথা বলেন তিনি। যদিও শুভেন্দুর দাবি, বিষয়টিকে যাওয়া-আসা ভাবলে ভুল হবে। কারণ কালিয়াগঞ্জের বিধায়ককে ভয় দেখিয়েছিল তৃণমূল। তিনি এও দাবি করেছেন, শুধু কালিয়াগঞ্জের বিধায়ককে নয়, তাঁদের একাধিক বিধায়ককেই ভয় দেখিয়ে দলে টেনেছে শাসক শিবির। একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদনে সৌমেনকে আবার দলে নেওয়া হয়েছে। তার কারণ, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী সহ বাকিদের বিরুদ্ধে তিনি যা বলেছেন তা নিজে থেকে বলেননি। তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তৃণমূল ভয় দেখিয়ে তাঁকে দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় এসব বলিয়েছিল। সৌমেনের মনে বিজেপি সম্পর্কে কোনও খারাপ ধারণা নেই।

এর মধ্যে দিয়ে শুভেন্দু এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে, এই বিষয়টিকে ঘরওয়াপসি বলা হলেও সৌমেন বিজেপির বিধায়কই ছিলেন এতদিন। তিনি বলেন, মাঝের কিছু সময়ে হয়তো সৌমেন রায় দিকভ্রষ্ট হয়ে গেছিলেন। তবে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজও তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন। তারপরই সৌমেন নিজের সিদ্ধান্ত নেন। বিরোধী দলনেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি নিয়ে বিধায়কদের একটি বৈঠক আছে। তাতে যোগ দিতে তিনিই সৌমেনকে ডেকেছিলেন। বিজেপির বিধায়ক দলের ডাকেই বৈঠকে যোগ দেবেন।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কাটাছেঁড়া শুরু করেছেন লোকসভা নির্বাচনের ভোটের অংককে সামনে রেখেই এই যোগদান কি না তা নিয়ে। এই ঘটনায় একাংশের ধারনা, উত্তরবঙ্গে সংগঠনের ক্ষেত্রে কোনওরকম ফাঁকফোকর রাখতে নারাজ গেরুয়া শিবির। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই দলবদল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − fifteen =