কলকাতা উত্তরে অস্বস্তি বাড়ালেন তাপস

উত্তর কলকাতায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস রায়ের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই নতুন নয়। এখন এই দ্বন্দ্বই বেশ বড় আকার নিয়েছে বিশেষ করে ১২ জানুয়ারির পর থেকে। কারণ, তাপস রায় বিশ্বাস করেন, তাঁর বাড়িতে গত ১২ জানুয়ারি যে ইডির তল্লাশি চলেছিল, তার নেপথ্যেও ছিলেন সুদীপই। তাঁর এও অভিমান যে, তিনি যে ‘চোর-জোচ্চোর’ নন, তা জেনেও দল সেদিন তাঁর ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। এদিকে শুক্রবার থেকে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কলকাতা উত্তরকে কেন্দ্র করে যা নিয়ে তৃণমূল বেশ অস্বস্তিতে। সুদীপকে প্রার্থী করা নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন কুণাল ঘোষ এবং তাপস রায়৷ সুদীপকে প্রার্থী করা হলে তিনি প্রচারে নামবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক৷ তাপস রায়  জানিয়ে দিয়েছিলে্ন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূল যদি ফের কলকাতা উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে দল, তাহলে তিনি প্রচারেই নামবেন না৷ এমন কি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করলেও তিনি নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক৷ শুধু তাই নয়, এমনও শোনা যাচ্ছে অবস্থার কোনও পরিবর্তন না হলে দল ছাড়তে পারেন বরানগরের বিধায়ক। কারণ ইতিমধ্যেই বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক ঘনিষ্ঠ মহলে এমনটাই নাকি ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে আবার তাপসের দল ছাড়ার জল্পনার মধ্যেই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷

এদিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, তাপস রায় তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ১০ মার্চ ব্রিগেডে তৃণমূলের জনগর্জন সভার প্রস্তুতির কোনও দায়িত্বই নিতে পারবেন না তিনি৷ এমনকি ব্রিগেডে যোগ দেওয়ার জন্য দূর দূরান্ত থেকে যে কর্মীরা আসবেন, তাঁদের একটা বড় অংশকে রাখা হবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে৷ এই কর্মীদেরই দেখভালের দায়িত্বে দলের যে নেতাদের উপর ছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তাপস রায়৷ যদিও তিনি এবার সেই দায়িত্ব পালন করতে অপারগ বলে দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন তাপস৷ প্রসঙ্গত, ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। তার মূল আয়োজনের দায়িত্ব থাকে সুব্রত বক্সি ও তাপস রায়ের উপর। কিন্তু এবার সুব্রত বক্সিকে তাপস মুখের উপর জানিয়ে দেন, তুমিই দেখে নাও ব্যাপারটা।অর্থাৎ, এর মধ্যে দিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন, তা তাঁর  এই সব সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে এই বার্তাই পৌঁছে দেন তাপস৷ তথ্য এও বলছে, জানুয়ারি মাসে বাড়িতে ইডি হানার পর থেকেই তাপস রায় দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন বলে খবর৷ এমন কি, গত ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে তিনি নিজের কেন্দ্র বরানগরেও যাননি। তবে তাপসবাবু এখনই খোলাখুলি না বললেও, কিছু যে একটা ঘটতে পারে তা আন্দাজ করার চেষ্টায় রয়েছেন অনেকেই। বড় ঘটনা ঘটলে তাঁর কোনও না কোনও ইঙ্গিত আগাম পাওয়া যায়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রাজনীতিতে নামতে পারেন তেমন সন্দেহ তাঁর কথাবার্তা শুনে অনেকেরই হয়েছিল। তাপসবাবুর ক্ষেত্রেও গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে নানা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে বরানগরের বিধায়ক ছাড়াও তাপস রায়ের একটা সাংগঠনিক পদ রয়েছে। তিনি তৃণমূলের ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। তাপস ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তাপস রায় কপিবুক প্লেয়ার। বাড়ির বৈঠকখানায় সুনীল গাভাসকারের সঙ্গে তাঁর একটি ছবি সযত্নে সাজানো রয়েছে। অঘটন যদি সত্যিই ঘটে তাহলে কপি বুক খেলবেন। সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তবেই নয়া ইনিংস শুরু হবে। তবে তার আগে যদি মানভঞ্জনের চেষ্টা হয়, তাঁকে মর্যাদা দেওয়া হয়, তাহলে অভিমান কেটেও যেতে পারে। কারণ মানুষটা আদতে মনে প্রাণে কংগ্রেসি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =