বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষদিনের এজলাসে আবেগতাড়িত অনেকেই

বিচারপতি পদে ইস্তফা দিতে চান অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রবিবারই এমন খবর প্রকাশ্যে আসে। সঙ্গে এও জানা যায় মঙ্গলবার ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। কারণ, বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করবেন বলেই জানিয়েছেন তিনি।এর পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার জল্পনাও চরমে।ইস্তফা দেওয়ার আগে সোমবার শেষবারে মতো এজলাসে আসেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির চেয়ারে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে এদিন বহু মানুষকেই ভিড় করতেও দেখা যায়। সব মিলিয়ে কোর্টরুমের মধ্যে তৈরি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত।

কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে খবর, এদিন বেলা সোয়া দু’টোয় এজলাসে বসেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গঙ্গোপাধ্যায়। মোট ৬৪টি মামলা ছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের হাতে। তার মধ্যে একটি মামলা এদিন শুনে অর্ডার দেন তিনি। বাকি ৬৩ টি মামলা ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২৯ বছর কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী পেশায় যুক্ত ছিলাম। সকলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে।’ এই সময় এক মহিলা মামলাকারী জানান, ‘আমি আপনার কাছ থেকে মামলায় অনেক সুরাহা পেয়েছি। আপনার জন্য আমার বাচ্চা চিকিৎসা পেয়েছিল। আমি এখনও আপনার জন্য খোরপোষের টাকা পাই। এই খবর পেয়ে আমি ছুটে এসেছি। আমি আপনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে চাই।’

মামলাকারীর এই কথা শুনে বিচারপতি বলেন, আপনার বাচ্চা কেমন আছে, ভালো আছে তো? আমি কারও পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম নিই না। এজলাসের ভিতরে তখন সাধারণ মানুষের ভিড়। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। ওই মহিলা মামলাকারী বলে ওঠেন, ‘এই ১৭ নম্বর কোর্টটা ছিল আমাদের কাছে মন্দির। আপনি চলে গেলে আমাদের কী হবে।’ যার প্রেক্ষিতে বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আমার জায়গায় অন্য কেউ আসবেন। তিনি নিশ্চয়ই আপনাদের সুরাহা করবেন।’ এদিকে আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য বিচারপতিকে বলেন, আপনার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি। আপনি চলে গেলে অনেক ক্ষতি হবে। আমাদের ছেড়ে যাবেন না। এ কথা শুনে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় জানিয়ে দেন, এখন থেকে নিজেকে অন্য কাজে নিয়োজিত করবেন তিনি। আইনজীবী তখন বলেন, আপনার কাজ তো এখনও শেষ হয়নি। এরপরেই চেয়ার ছেড়ে উঠে হাত জোড় করে নমস্কার করেন বিচারপতি। তারপর আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের দিকে হাত নেড়ে শেষবারের মতো এজলাস ছাড়েন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, রবিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজের ইস্তফার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই তোলপাড় পড়ে যায় বাংলাজুড়ে। একইসঙ্গে তিনি যেহেতু রাজনীতিতে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন, তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য় রাজনীতিতেও ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। তবে তিনি কোন দলে যোগ দেবেন সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে এখনও কিছু বলেননি। তবে সেটা যে তৃণমূল কংগ্রেস নয়, তা মোটামুটি স্পষ্ট। এদিকে কোনও কোনওমহল থেকে দাবি করা হচ্ছে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন তিনি। কোনও কোনও জায়গা থেকে শোনা যাচ্ছে, তিনি বারাসত লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়তে পারেন। যদিও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে অবশ্য এই নিয়ে কিছু বলেননি। সেক্ষেত্রে ইস্তফা দেওয়ার পর বাস্তবেই কোন দলের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি, এখন সেদিকেই নজর সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =