লোকসভা নির্বাচনে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে চায় নির্বাচন কমিশন

রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর নির্বাচন কমিশন। আর সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনকেই। বিষয়টি সুনিশ্চিত করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।  রবিবারই এ রাজ্যে এসেছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বাধীন ফুল বেঞ্চ। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্য সচিব ও ডিজির সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সোমবার সকালে বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। এরপর সোমবার রাজ্যের সমস্ত জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠকে বসে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেখানেই তাঁদের এই নির্দিষ্ট নির্দেশাবলী জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, লোকসভা নির্বাচনে অশান্তি রুখতে কমিশন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি’তে চলবে। কোনওভাবেই যাতে অন্যান্য বারের মতো হিংসা, হানাহানির অভিযোগ না আসে সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফ থেকে। অবাধ, হিংসামুক্ত, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। ভোটাররা যাতে উৎসবের মেজাজে ভোট দেন।এই প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রতিটি জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশিকাও দিয়েছে কমিশন। এই সব নির্দেশিকা যথাযথভাবে পালনের ব্যাপারে আর্জি জানানো হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে কর্তব্যে গাফিলতি বলে কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।

এরই পাশাপাশি সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট প্রক্রিয়া, অশান্তি দমন, ভোটারদের প্রভাবিত না করার ব্যবস্থার নিশ্চয়তা, ভোট বেআইনি অর্থ লেনদেন রোধ থেকে শুরু করে সার্বিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশিকা দিয়েছে কমিশন। এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, সব পক্ষের কাছে সমান মর্যাদাপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। কমিশনের পর্যবেক্ষক, জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তবে রাজ্যে যাঁরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন, যেমন গ্রিন পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়রদের যাতে ভোটের কাজে ব্যবহার করা হবে না। কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন করার বিষয়টি সাপ্তাহিক বৈঠকে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে জানাতে হবে। একইসঙ্গে নিচু তলার অফিসাররা যাতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এরই পাশাপাশি ভোটারদের কোনও রকম প্রলোভ্ন দেখানো না হয় সেদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।

লোকসভা নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আরও বেশি করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে হবে। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের অবশ্যই বুথ পরিদর্শন করতে হবে। এরই পাশাপাশি পোলিং এজেন্টদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে যাতে কোথাও কোনও ভুল না থাকে। পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যাতে সহজে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় সে ব্যাপারে বিশদ তথ্যও প্রকাশ করা হবে। পর্যবেক্ষকদের যোগাযোগের নম্বর সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হবে।

সব নাগরিকের কাছে ভোটার ইনফরমেশন স্লিপ পৌঁছন নিশ্চিত করতে হবে। ভোটিং স্লিপ বিতরণ করার সময় যাতে কোনওরকম ত্রুটি না থাকে সে ব্যাপারেও নিশ্চিত করতে হবে। ছাপ্পা ভোট রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ছাপ্পা ভোট নিয়ে কোনওরকম অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। স্ট্রং রুমের ইভিএম মেশিনের সুরক্ষার জন্য ত্রি-স্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পাশাপাশি চলবে সিসিটিভির নজরদারিও। সঙ্গে এও জানানো হয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনও পক্ষের অভিযোগ সমান গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।

এরই পাশাপাশি অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপ আটকাতে লোকসভা নির্বাচনে এবার ব্যবহার করা হবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। সাংবাদিক বৈঠকে এদিন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এক্ষেত্রে সব কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে একটি পোর্টাল। আর্থিক দুর্নীতি আটকাতে সাহায্য নেওয়া হবে এই পোর্টালের।’ এছাড়াও আর্থিক দুর্নীতি আটকাতে এদিন নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, ‘ব্যাঙ্কের আধিকারিকদেরও বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের টাকার ভ্যান যেন বিকাল পাঁচটার পর রাস্তায় না বেরয়। রাজ্যে যতগুলো হেলিপ্যাড, বিমানবন্দর রয়েছে, সেখানে কড়া নজরদারি থাকবে। জেলাশাসক যখন কোনও হেলিকপ্টার কিংবা বিমানকে অবতরণের সবুজ সঙ্কেত দেবেন, তখন ইডি আধিকারিক ও বিসিএস-এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকেও দিতে হবে।’

এদিকে বর্তমান দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর ছড়ানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে। নাগরিকদের সচেতন করতে তাই, জেলাভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া সেল তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। দ্রুত ভুয়ো খবর সম্পর্কে সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। সঙ্গে এও বলা হয়েছে, নির্দেশ না মানলে কমিশনের তরফেও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়েও মুখ্য কমিশনার রাজীব কুমার জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী সব রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সেরকমই এই রাজ্যের কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। সেই বাহিনী কোথায় কতটা প্রয়োজন, সেটা ঠিক করবেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক, স্টেট পুলিশ নোডাল অফিসার এবং সেন্ট্রাল অবজার্ভার। তাঁরা তিনজন মিলেই নিরপেক্ষ ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। জেলায় জেলায় সংশ্লিষ্ঠ জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি তদারকি করবেন। তবে মঙ্গলবার রাজীব কুমার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনও গণ্ডগোল হলে দায়ী থাকবেন ডিজিপি। কমিশনের কাছে রাজ্যের সমস্ত রিপোর্ট রয়েছে। নির্বাচনে কোনওভাবে পেশিশক্তি, অর্থশক্তিকে বরদাস্ত করা হবে না। ভোট পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পর্যায়ের হিংসাকে কড়া হাতে দমন করা হবে। কোনও রকমের সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে থাকবে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা।

এদিন প্রশ্নোত্তর পর্বে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, শাসকদলই চাইছে বাংলায় যাতে এক দফায় নির্বাচন করা হয়। এদিকে নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য অবাধে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এরই রেশ ধরে তিনি এও জানান, ‘কিছু রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়েছে, যাতে নির্বাচনকে এক দফায় করানো যায়। আধার কার্ড যদি বাতিলও হয়ে যায়, তাতেও ভোটে যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, ভোটিং মেশিনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি উঠেছে। তবে নির্বাচন কত দফায় হবে, সেটা  নির্ধারিত নয় এখনই। কারণ বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষকরা জেলায় জেলায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে যেদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সংবাদমাধ্যমকেই প্রথম জানানো হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − eight =