৭ মার্চ বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন। সম্ভবত, ৭ তারিখ তিনি যোগদান করছেন বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সঙ্গে এও জানান, বিজেপি একমাত্র সর্বভারতীয় দল যা তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে হাইকোর্টে নিজের পদ থেকে মঙ্গলবার ইস্তফা দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছেও নিজের পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন। রবিবার নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরই বঙ্গ রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়, রাজনীতির ময়দানে এবার দেখা যাবে কি না অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এর উত্তর মিলল তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই। উত্তরে স্বয়ং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘বিজেপি একমাত্র দল যারা তৃণমূলের মতো দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে লড়ছে। এখানে আর কোনও সর্বভারতীয় পার্টি নেই তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করার মতো।’ পাশাপাশি এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান, ‘আমি টিকিট পাব কী না পাব জানি না। লড়ি বা না লড়ি আপাতত বিজেপিতে যোগদান করলাম।’ এরই রেশ ধরে প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান, ‘তৃণমূলই রাজনীতিতে নামার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁদের মুখপাত্ররা বহু সময়ে অপমানজনক কথা বলেছেন। তাঁরা জানেন না বিচারপতিকে আক্রমণ করা যায় না। শুধু তাই নয়, জজকে উদ্দেশ্যে করে গালিগালাজ করেছেন। আসলে ওদের অনেক দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল।’ এরই পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, ‘বড় বড় অনেক দুষ্কৃতী মন্ত্রী-আমলার ছদ্মবেশে লুকিয়েছিলেন। তাঁরা আপাতত জেলে আছেন, গড়াগড়ি খাচ্ছেন আমি জানি না।’ এরই পাশাপাশি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এও মনে করিয়ে দেন,  ভদ্র লোকেদের রাজনীতিতে প্রয়োজন। না হলে দুবৃত্তরা রাজনীতি দখল করে নিয়েছে। বাঙালিদের রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা রয়েছে। তবে এদের জন্য আসে না।

এদিকে প্রাক্তন বিচারপতি যে রাজনৈতিক ময়দানে পা রাখতে চলেছেন, তা নিয়ে আগেই আভাস মিলেছিল। কিন্তু কেন বিজেপিতেই যোগ এই প্রসঙ্গে জল্পনা শুরু হয় তাঁর এই যোগদানের কথা সাংবাদিকে বৈঠকে জানানোর পর থেকেই। জল্পনা চলতে থাকে, বিজেপি-ই তাঁকে ডেকে নিয়েছেন নাকি তিনি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন তা নিয়েও। এই সব জল্পনারও উত্তর এদিন সাংবাদিক বৈঠকে দিতে দেখা যায় প্রাক্তন বিচারপতিকে। এই প্রসঙ্গে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘আমার বিজেপিতে যাওয়া দুতরফেরই সিদ্ধান্ত। বিজেপির তরফ থেকে প্রস্তাব এসেছিল। আমিও এই বিষয়টা নিয়ে আগেই ভাবনাচিন্তা করেছিলাম। আমি সাত দিন ধরে ছুটিতে ছিলাম। আমি শেষ ওই সাত দিনেই চিন্তাভাবনা করেছি।’ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে আরও স্পষ্ট করে জানান, ‘বিজেপির সঙ্গে আমি আর আমার সঙ্গে বিজেপি শেষ ৫-৬ দিনের মধ্যে যোগাযোগ করেছি। আমি আদালতে ৭ দিন ছুটি নিই। এই ছুটি নেওয়ায় ক্ষতি কিন্তু আমারই হয়। কল্যাণ কিংবা কুণালের কিন্তু হয়নি ক্ষতি। যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে, তার জন্যই ছুটি নিয়েছিলাম। শুধু সোমবার আমি কোর্টে বসেছি, কতগুলো মামলা ছেড়ে দিতে হবে বলে।’ এরই রেশ টেনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় এও জানান, ‘তৃণমূলই আমাকে রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। শাসকদল আমাকে নানাভাবে অপমান করেছে। শাসকদলের মুখপাত্ররা আমাদের অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। বিজেপিই তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিজেপি সর্ব ভারতীয় পার্টি। তাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।’

এদিন তাঁর এই যোগদান প্রসঙ্গে সামনে আসে সন্দেশখালি প্রসঙ্গও। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন বিচারপতি এও জানান, কেবল সন্দেশখালির মতো ঘটনাই যে তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, তেমনটা নয়। তাঁর বক্তব্য, ‘সন্দেশখালির মতো ঘটনা রাজ্যের আরও অনেক জেলায় রয়েছে।’

তবে এদিন এ প্রশ্নও ওঠে যে বামেদের সঙ্গে কেন গেলেন না তিনি তা নিয়েও। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে সেই কারণ স্পষ্ট করেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, ‘সিপিএম-এ যেতে পারতাম। কিন্তু, আমি ধর্মে বিশ্বাস করি, ওপরওয়ালায় বিশ্বাস করি, ধর্ম পালন করি। তারা সেগুলো করে না। হয়তো কেউ কেউ ভেতর ভেতর করে। বাইরে করে না। তাই দলে গিয়ে কী করব! কোন মিল হবে না!’ আর কংগ্রেস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই দল বহুদিন ধরে একটি পরিবারের জমিদারি। সেই পরিবারের সমর্থক হয়ে কিছু নেতা যেমন জয়রাম রমেশ ঘুরে ঘুরে বেড়ান। তাঁরা কোনও পদও পাবেন না। কাজও করতে পারবেন না। এছাড়াও ওই দলেরই নেতা অতুল্য ঘোষের একটি বই পড়েছি। সেই বইয়ে কংগ্রেস দলের চরিত্র লেখা ছিল।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 7 =