সচ্ছলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারিশ্রমিকে লিঙ্গভিত্তিক ব্যবধানের ধারণা ও বৈষম্য বাড়তে দেখা যাচ্ছে

ইন্ডিয়া,৭ মার্চ, ২০২৪ – ডিবিএস ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া,ক্রিসিল -এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘উইমেন অ্যান্ড ফাইন্যান্স’ শীর্ষক তাদের সার্বিক সমীক্ষার তিনটি রিপোর্টের দ্বিতীয়টি লঞ্চ করল। এই সমীক্ষাটি ভারতের ১০টি শহর জুড়ে ৮০০-র বেশি মাস মাইনে পাওয়া এবং স্বনিযুক্ত মহিলাকে নিয়ে করা হয়েছে। এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে এই সব নারীদের পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার পছন্দগুলির আন্তঃসম্পর্ক উদ্ঘাটন করতে।

এই দ্বিতীয় রিপোর্টে কর্মীবাহিনীতে মহিলাদের তুলনাহীন অবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান উপলব্ধি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অভ্যাস এবং তাঁরা যেসব বাধার সম্মুখীন হন এমন সব ইস্যুতেই। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে বয়স, আয়, বৈবাহিক অবস্থান এবং স্থান মহিলাদের পছন্দকে প্রভাবিত করে। এখানে তুলে ধরা হয়েছে, মাসিক মাইনে পাওয়া মহিলাদের গতিপ্রকৃতি এবং তাঁরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন সেই সব ঘটনাকেও। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাইনের পরিমাণ এবং কেরিয়ারের উন্নতির জন্য ৬৯% মহিলার চাকরি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রকে প্রধানতম বিষয় হিসেবে মনে করছেন। অন্যদিকে ৪২% স্বনিযুক্ত মহিলা স্বাধীনতা এবং কাজের সময়ের নমনীয়তাকে অগ্রাধিকার দেন। এই উপলব্ধি নানারকম প্রয়োজন ও পছন্দকে জায়গা করে দেওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের নীতিগুলিকে বদলে নেওয়ার গুরুত্বকেও তুলে ধরেছে। তবে এটাও লক্ষণীয়, দূর থেকে কাজ করা মাইনে পাওয়া মহিলাদের অনেকের মধ্যেই অগ্রাধিকার পায় না। মাত্র ৩% মনে করেন এই সুযোগ অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

সবথেকে বড় কথা হল, এই সমীক্ষার ফলাফল কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন লিঙ্গবৈষম্য আছে বলে যে ধারণা ইন্ডাস্ট্রিতে চালু, তাকেই প্রমাণ করে। এই রিপোর্টে উদ্ঘাটিত হয়েছে যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক পারিশ্রমিকের ব্যবধান মাইনে পাওয়া মহিলাদের মধ্যে ২৩% বলে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে বলে মনে করছেন ১৬%। মোটামুটি সচ্ছল মহিলা, যাঁরা বছরে ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন। আর সচ্ছল মহিলা, যাঁরা বছরে ৪১ থেকে ৫৫ লাখ টাকা আয় করেন। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের প্রশ্নেও সচ্ছল মহিলাদের ৩০% বলেছেন তাঁদের বৈষম্যমূলক ব্যবহার পাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই সংখ্যা মোটামুটি সচ্ছল মহিলাদের দলের থেকে অনেকটাই বেশি। তাঁদের ১২% এই ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে মেট্রো শহরের ৪২% মাইনে পাওয়া মহিলা মাইনে নিয়ে দরাদরি করার মতো ঘটনার সম্মুক্ষীন হন। এই অভিজ্ঞতা ভারতের পূর্বাঞ্চল আর পশ্চিমাঞ্চলে আলাদা রকমের। কলকাতায় ৯৬% মাইনে পাওয়া মহিলার মাইনে নিয়ে দরাদরি করতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে দক্ষিণ ভারতের মধ্যেও আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া গেছে। চেন্নাইতে ৭৭% মহিলার মাইনে নিয়ে দরাদরি করতে কোনো অসুবিধা হয় না, হায়দরাবাদে সেই সংখ্যা ৪১%।

এই প্রসঙ্গে এইচ আর, ডিবিএস ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড কান্ট্রি হেড কিশোর পোদুরি জানান, ‘মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধিকার নিশ্চিত করতে কর্মীবাহিনীতে মহিলাদের অংশগ্রহণে উৎসাহ দেওয়া জরুরি। এই সমীক্ষা থেকে পাওয়া উপলব্ধি সংগঠনগুলোকে মহিলাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও ভাল করে বুঝতে এবং তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী নিজেদের কৌশল তৈরি করার সুযোগ দেবে। এর ফলে মহিলাদের কেরিয়ার আরও তৃপ্তিদায়ক হয়ে উঠতে পারে, কর্মীবাহিনীতে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে এবং তাঁদের পক্ষে যতখানি অবদান রাখা সম্ভব সেই ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা যাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =