বিজেপি হটাওয়ের ডাক উঠল ঐতিহাসিক ‘হাইটেক’ ব্রিগেডের হাত ধরে

Featured Video Play Icon

ঐতিহাসিক ব্রিগেডের সাক্ষী থাকল কলকাতাবাসী। শুধু কলকাতাবাসী নয়, তৃণমূলের জনগর্জনের এই ব্রিগেড সমাবেশ উপস্থাপনার দিক থেকে রাজ্যবাসীর জন্য রবিবাসরীয় দুপুরে রেখেছিল এক চমক। এককথায় যদি বলতে হয়, তাহলে একটাই শব্দবন্ধ এখানে ব্যবহার করা যেতে পারে তা হল এক ‘হাইটেক’  উপস্থাপনা। আর এই হাইটেক উপস্থাপনার মধ্যে দিয়েই উঠল ভারতীয় রাজনীতির কুর্সি তথা বঙ্গ রাজনীতি থেকে বিজেপিকে বিসর্জনের বার্তা।

রবিবারের সকালে ব্রিগেডে পা রাখতেই সবার নজরে আসে জনগর্জন সমাবেশের মোট তিনটি মঞ্চ। মূল মঞ্চ লম্বায় ৭২ ফুট, গভীরতায় ২০ ফুট। আর মাটি থেকে এর উচ্চতা  প্রায় ১২ ফুট। মূল মঞ্চের পাশাপাশি ছিল তুলনামূলক ছোট আকারের দুটি মঞ্চ। এগুলির মাপ ৬৮/২৪ ফুট। এই ছোট দুটি মঞ্চের একটি ছিলেন রাজ্যের বিধায়কেরা। অন্যটিতে মেঘালয়, অসম, ত্রিপুরা সহ  ভিন রাজ্যের দলীয় নেতৃবৃন্দ। এদিন ব্রিগেডকে মোট ৫৬টি জোনে ভাগ করা হয়। মঞ্চের সামনের দুই দিকে ২৮টি করে জোন। তবে সবার নজর কাড়ে নীল কার্পেটে মোড়া ব়্যাম্প।২৮টি করে যে দুটি মূল জোন রয়েছে তার মধ্যে দিয়েই আড়াআড়ি যোগচিহ্নের আকৃতিতে এই দুটি ব়্যাম্প বিস্তৃত। পূর্ব-পশ্চিম এবং উত্তর-দক্ষিণ ভেদ করা প্রায় ৩৪০ মিটারের এই ব়্যাম্প দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড যে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের পৌঁছে যেতে পারবেন তার আভাস মিলছিল এই সভার আগে থেকেই।

বাস্তবে দেখা গেল অনুমান ভুল কিছুই হয়নি।ব্রিগেডের সভায় অভিষেক পা রাখার কিছু পরেই ব়্যাম্পে হেঁটে পৌঁছে যান  জনতার মাঝে। সেখান থেকেই তিনি জনতার উদ্দেশ্যে দিতে থাকেন বার্তাও। সঙ্গে ছিল জয় বাংলা স্লোগানও। এরই পাশাপাশি নতজানু হয়ে মাথা ঠেকিয়ে জনসভায় উপস্থিত সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে প্রণামও জানাতে দেখা যায় তাঁকে। শুধু তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডই নন, জনগর্জন সভায় পৌঁছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ব়্যাম্প ধরেই কর্মী- সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে নাড়তে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। এখানেই শেষ নয়, বক্তব্য রাখার পর তিনি ৪২ জন লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থাীকে ওই ব়্যাম্পে নিয়ে তিনি পরিচয়ও করিয়ে দেন।

তৃণমূলের ‘জনগর্জন সভা’য় যে পরিকাঠামোগত পরিকল্পনা এদিন করা হয়েছে তার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট ধাঁচ স্পষ্ট। যা সাধারণত দেশ-বিদেশের কনসার্টে দেখা যায়, তা-ই তৈরি হয়েছে তৃণমূলের রাজনৈতিক সভায়।

এদিকে মঞ্চের ব্যাকড্রপে ছিল এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড।বিশালাকার তিনটি এলইডি ডিসপ্লে বোর্ডের সাহায্যে সভার শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মী, সমর্থকও যেন বক্তার বক্তব্য শোনার পাশাপাশি যাতে মঞ্চে কারা বক্তব্য রাখছেন বা ঠিক কি ঘটছে মঞ্চে তা বুঝতে পারেন তার জন্য এই হাইটেক বন্দোবস্ত।আর এই এলইডি ডিসপ্লে বোর্ডে অভিষেকের বক্তব্য রাখার পর এক স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি ডকুমেন্টারিও দেখানো হয়। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে বাংলার মানুষদের বঞ্চনার কথা। সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে নানা ঘটনা। যাতে আমজনতা বুঝতে পারেন বিরোধী তথা বিজেপির বক্তব্যে কতটা সারবত্তা রয়েছে তাও।এককথায় নিটোল এক ব্যবস্থাপনা। যার মধ্যে দিয়ে প্রতি ছত্রে বিদ্ধ করতে দেখা গেছে কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্বকেও। এছাড়াও প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়েও প্রত্যেক প্রার্থীর নাম ও ছবি ফুটে ওঠে এই এলইডি ডিসপ্লে বোর্ডেও।

এছাড়াও গোটা ব্রিগেড জুড়ে ছিল প্রায় হাজার দেড়েক চোঙ। যাতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যেকের বক্তব্য স্পষ্ট  ভাবে পৌঁছ দেওয়া যায় সমাবেশে আগত প্রত্যেকের কাছেই। আর এই চোঙের মধ্য দিয়েই তৃণমূল সুপ্রিমো থেকে অভিষেকের  বঙ্গ থেকে বিজেপি উথখাতের বার্তা পৌঁছে গেল ব্রিগেডে আগত সকলের কাছেই। সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৪২-এর ৪২ করার বার্তাকেও। এদিন যাঁরা ব্রিগেডে এসেছেন তাঁদের মধ্যে পক্ককেশীর সংখ্যাও কম নয়। কোনও দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এই ধরনের পরিকাঠামো তাঁরা আগে কখনও দেখেছেন কি না তা মনে করতে পারেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 12 =