সৃজন-শায়নীর ভোটযুদ্ধের মাঝেও  সম্প্রীতির ছবি যাদবপুরে

সৃজনকেই লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে বামেদের তরফ থেকে টিকিট দিয়েছে দল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর নাম ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সৃজনের বাড়ি কিন্তু যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রেই। কসবার হালতুতে। নাম ঘোষণা করা মাত্রই এলাকার বাম কর্মীরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েন সৃজনের হয়ে ভোট প্রচারে। দিকে দিকে চোখে পড়ছে দেওয়াল লিখনের ছবি। আর সৃজন বলছেন, ‘যাদবপুর জানে আমার প্রথম সব কিছু।’

প্রসঙ্গত, শেষ লোকসভা যাদবপুর থেকে লড়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সিপিএম নেতা তথা বরিষ্ঠ আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। হারতে হয়েছিল তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর কাছে। যদিও এবার টিকিট পাননি মিমি। উল্টে যাদবপুর থেকে লড়ছেন আর এক তারকা প্রার্থী সায়নী ঘোষ। তিনি আবার ইতিমধ্যেই প্রার্থী হওয়ার জন্য সৃজনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলছেন, ‘অল দ্য বেস্ট। তবে আমার লড়াই শুধু সৃজন বা অনির্বাণবাবুর বিরুদ্ধে নয়। লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে। বহিরাগত অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই।’ পাল্টা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সৃজনও। বলছেন, ‘আমি ওনার অল্প কিছু অভিনয় দেখেছি। অভিনয় ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল। আমার মতোই তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ। ভাল থাকুন।’

এর আগে সৃজনকে লড়তে দেখা গিয়েছিল বিধানসভা ভোটে। সিঙ্গুর থেকে হয়েছিলেন একুশের বিধানসভা ভোটের বাম প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন তৃণমূলের বেচারাম মান্না, বিজেপির রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তবে পরাজয় মানতে হয় সৃজনকে। লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের নিরিখে তিনি বেশ শিক্ষানবিশ। এদিকে ২০২৪-এর নির্বাচনে যাদবপুরে বিজেপির প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, তৃণমূল প্রার্থী সায়নীর বিরুদ্ধে লড়াইটা কী বেশ শক্ত হতে চলেছে এমন প্রশ্নের মুখেও সৃজন জানাচ্ছেন, ‘যাদবপুর তৃণমূল সম্পর্কে বিরক্ত। যাদবপুর বোঝে যে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল একটা বোঝাপড়া করে রেখেছে। বিজেপি ফাইনালি তৃণমূলকে শাস্তি দেবে না। তৃণমূলের চোরগুলিকে ধরবে না। যাদবপুর বিকল্প খুঁজছে। তাই রোটি-কাপড়া-মাকানের দাবি নিয়েই আমাদের লড়াই।’ এখানেই না থেমে ব্যক্তি রাজনীতির ঊর্ধ্বে নিজেকে তুলে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সৃজন ভট্টাচার্য লড়াই করতে নামিনি। কাস্তে-হাতুড়ি-তারা সিপিআইএম লড়াই করতে নেমেছে। উল্টোদিকে কলা গাছ দাঁড়ালেও তৃণমূল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়ালেও তৃণমূল। ফলত, ব্যক্তি প্রার্থীকে নিয়ে আমার কোনও কথা বলার নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের সিম্বল, তৃণমূল কংগ্রেস দল, ওদের নীতি, সাংসদ মিলে যা গোলমাল হয়েছে তা তুলে ধরাই আমার কাজ।’

এদিকে যাদবপুরে যেহেতু তাঁর পড়াশোনা আর চেনা মুখের ভিড়ে ঘরের আসনে প্রার্থী হতে পেরে কতটা অ্যাডভ্যান্টেজে সৃজন এই প্রসঙ্গে বাম প্রার্থী জানান, ‘আমি যাদবপুরের ছেলে, যাদবপুরে জন্ম, যাদবপুরে পড়াশোনা, যাদবপুরের রাস্তায় প্রথম সিগারেট, এখানেই প্রথম প্রেম, এখানেই প্রথম প্রেম ভাঙা। সেই একটা গান ছিল না এই শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু। যাদবপুর জানে আমার প্রথম সব কিছু।’ তবে নিজেকে ঘরের ছেলে বলে বাড়তি সুবিধা নিতে নারাজ। এরই রেশ ধরে তিনি এও জানান, ‘চেনা এলাকা হওয়ায় বাড়তি কিছু সুবিধা করবে তো বটেই। তবে ঘরের ছেলে আমি বলতে চাই না। তাঁরা বলে যাঁদের রাজনীতি কম থাকে, ফলে আবেগে ধাক্কা দিতে হয়।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × five =