বেহালার ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের জে কে পাল রোডে ধরা পড়ল পুকুর ভরাটের সেই বেনিয়মের ছবি। প্রায় ১০ কাঠা জলাশয় আগাছা-কুচুরিপানায়-আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। চারপাশ থেকে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা, নির্মাণের বর্জ্য। বাসিন্দাদের বক্তব্য, জলাশয়ের গভীরতা প্রায় ১৫ ফুটের আশপাশে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য জানাচ্ছেন, এই বিশাল জলাশয় এখন প্রমোটারদের স্বর্গরাজ্য। একইসঙ্গে তাঁরা এ আশঙ্কাও করছেন, গার্ডেনরিচ থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে এই জলাশয় ভর্তি করেও তৈরি হবে বহুতল। আর তা হচ্ছে প্রশাসন পুরসভার আঁতাতে। এই প্রসঙ্গে আরও বিস্ফোরক এক উক্তি করতে দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দাকে। তিনি স্পষ্টই জানান, ‘এই পুকুরগুলো ভরাটের পিছনে রয়েছে অসাধু প্রমোটারের হাত। এর সঙ্গে একজন প্রভাবশালী প্রমোটার রয়েছেন। ওই প্রমোটারের স্ত্রী আবার কাউন্সিলর।’ এরই সঙ্গে সামনে এল আরও এক তথ্য। এই প্রসঙ্গেই অপর এক বাসিন্দা জানান, ‘কোনও প্রতিবাদ করতে গেলেই কখনও থানার মারফত, কখনও স্থানীয় মারফত ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। মেয়রের ওয়ার্ড থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জলাশয় ভরে যাচ্ছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী-মেয়র সবাই এত বড় বড় কথা বলছেন।’
এই প্রসঙ্গে বাম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ‘সংখ্যাটা আমার মনে নেই। তবে আমরা সার্ভে করে দেখেছিলাম, জলাশয় কত আসে, নির্দিষ্ট করে এসেছিলাম। সে সময় যা জলাশয় ছিল, তার ৬০ শতাংশ ভর্তি হয়ে গিয়েছে।’ আর এখানেই বিকাশ রঞ্জনের প্রশ্ন, মেয়র জানেন না বা কাউন্সিলর জানেন না তা কি করে হয়। কারণ, মেয়র তো নিজেই একজন কাউন্সিলর ছিলেন।
এদিকে স্থানীয় কাউন্সিলর কাকলি বাগের গলায় একেবারে ভিন্ন সুর। তিনি জানান, ‘এখান পুকুর ভরাট হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। আমি তো পরিবেশ বাঁচানোর পক্ষেই। আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের কথা আমরা ভাববো না? আমি যদি দেখি কোনও অনৈতিক কাজ হচ্ছে, নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ অন্যদিকে, ১৩ নম্বর বরো চেয়ারপার্সন রত্না শূরও জানান, ‘এখন পুকুর ভরাট কোনওভাবেই হয় না। আইন অত্যন্ত কড়া হয়ে গিয়েছে। আমাদের তো পুলিশকে বলা আছে, কোথাও এমন কোনও অভিযোগ দেখলেই গ্রেফতার করতে।’ যদিও ফিরহাদ হাকিম আগেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, বেআইনি নির্মাণ কোথায় হবে, সেটা দেখা পুরকর্তাদের কাজ। কাউন্সিলরদের নয়। তবে পুকুর ভরাট হলে, তা যে কাউন্সিলরদেরই দেখার বিষয়, তাও স্পষ্ট করেছেন মেয়র।