বিধাননগরের জি সি-৩০ থেকে উদ্ধার হল বৃদ্ধার দেহ। বৃদ্ধার নাম মন্দিরা মিত্র। বাড়ির ভিতর থেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁর স্বামী যদুনাথ মিত্রকেও। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন বিধান নগরের পুলিশ কমিশনার। ঘটনাস্থলে পৌঁছান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও। স্থানীয় সূত্রে খবর, বৃদ্ধ দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়িতে থাকতেন। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। হত্যা না আত্মহত্যা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে বাড়ির পরিচারিকা জানান, বুধবার সকালে পরিচারিকা বাড়িতে প্রবেশ করেই চমকে যান। নজরে আসে ডাইনিং রুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধ। এরপর একটু এগিয়েই দেখেন বাথরুমে পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধা। তাঁর শরীরও রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এরপরই লোকজন ডাকেন পরিচারিকা। একইসঙ্গে পরিচারিকা এও জানান, অন্যান্য দিন সকালে ওই দম্পতি দোতলায় ওঠার দরজা খুলে রাখেন তাঁর জন্য। সেই সঙ্গে দোতলায় ল্যান্ডিং-এ গ্রিলের দরজাও খুলে দেন। বুধবার সকালে ওই দরজা খোলা ছিল। আর তা দিয়ে ওপরে যেতেই এই দৃশ্য দেখতে পান পরিচারিকা। পরে তিনি নিচে গিয়ে চেঁচামেচি করলে আবর্জনা তুলতে আসা ব্যক্তি ও পাশের বাড়ির বাসিন্দারা আসেন। এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এরপরই বৃদ্ধা মন্দিরা মিত্রকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপরই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় তাঁর দেহ। তবে তাঁর স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সূত্রে খবর, আহত বৃদ্ধ ড. যদুনাথ মিত্র সেনাবিভাগে কর্মরত ছিলেন। বাড়ির ভিতর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে বলেও সূত্রের খবর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাইনিং টেবিলে পড়েছিল একটি রক্তমাখা ছুরি, টেবিলের নীচে ছিল আর একটা। আর তৃতীয় ছুরি পাওয়া যায় বৃদ্ধের পায়ের কাছ থেকে। টেবিলের ওপর ছিল সুইসাইড নোট। তাতে প্রথমে চার লাইন বাংলায় লেখা। সেখানে বৃদ্ধ লেখেন, তিনি তাঁর স্ত্রীকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে, সুইসাইড নোটের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে পারিবারিক বেশ কিছু কথা।
সেই নোট থেকেই জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ সম্প্রতি তাঁর গাড়ি বিক্রি করেছিলেন, কারণ গাড়িটি ব্যবহার হয় না। সেই গাড়ি বিক্রির পর হঠাৎ পুরনো ট্রাফিক ভায়োলেশনের চিঠি আসে। কিন্তু সেই সময় তিনি গাড়ি বিক্রির প্রয়োজনীয় নথি বের করে প্রমাণ করতে পারেননি। এতে তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। সঙ্গে এও জানা গেছে, সম্প্রতি নিউটাউনে একটি জমি বিক্রি করে এক কোটি টাকা পান ওই বৃদ্ধ। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে তাঁকে ফের বকাবকি করেন। কেন তিনি একটু অপেক্ষা করে নতুন অর্থবর্ষে জমি বিক্রি করলেন না, তা নিয়েও নাকি প্রশ্ন তুলেছিলেন স্ত্রী ও মেয়ে। পুলিশের অনুমান, মেয়ে, স্ত্রী-র সঙ্গে অশান্তির জেরেই মানসিকভাবে তিনি আঘাত পেয়ে এরকম এক চরম সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে সূত্রে এ খবরও মিলেছে, দম্পতির দুই মেয়ের একজন সিঙ্গাপুর থাকেন, ছোট মেয়ে থাকেন নিউ টাউনে। তবে তদন্তে নেমে পুলিশের ধারনা, এই ঘটনা ঘটেছে এদিন সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে। পুলিশ ঘর থেকে একটি অ্যাসিডের বোতল পেয়েছে এবং বৃদ্ধের মুখে অ্যাসিডের ক্ষতও পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, স্ত্রীকে খুন করে অ্যাসিড খেয়ে নিজের ওপর ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। রক্তমাখা সেই ছুরিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা জানান, ডক্টর মিত্র জীবিত রয়েছেন, তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কমিশনার আরও জানান, সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে নিজের স্ত্রীকে মার্ডার করে নিজে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছেন বলেই লেখা রয়েছে।