বিজেপির বিরুদ্ধে ফের এজেন্সি রাজনীতির অভিযোগ তৃণমূলের

বিজেপির বিরুদ্ধে ফের অভিযোগ উঠল ‘এজেন্সি রাজনীতি’-র। একইসঙ্গে অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ বিজেপি যোগসাজশেই ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে দুই তৃণমূলনেতাকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। এবার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিক তথ্য, নথি প্রকাশ করে বিজেপির বিরুদ্ধে জোরাল আক্রমণ শানাতে দেখা গেল তৃণমূলকে। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে এ বিষয়ে নথিপত্র সামনে আনেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এরই পাশাপাশি তৃণমূলের তরফ থেকে এও জানানো হয়, ‘বাংলা বিরোধী’ ষড়যন্ত্র করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, তাতে মূল চক্রান্তকারী ছিলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি, এই দাবিতে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে তৃণমূল।

প্রসঙ্গত, ভূপতিনগর বিস্ফোরণের তদন্তে গিয়ে শনিবার ‘আক্রান্ত’ হতে হয় এনআইএ-কে। এরপরেই গ্রেফতার করা হয় দুই তৃণমূল নেতা বলাইচরণ মাইতি এবং মনোব্রত জানাকে। এরপর থেকেই তপ্ত রাজনৈতিক মহল। ভোটের সময় এজেন্সিগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে। এরপরই রবিবার সাংবাদিক বৈঠক হয় তৃণমূল ভবনে।

এদিনের এই সাংবাদিক বৈঠক থেকে কুণাল ঘোষ জানান, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লাগু হওয়ার পর এনআইএ আধিকারিকের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এর পাশাপাশি কুণালের দাবি, ‘মানুষ জেনে গিয়েছে, বিজেপির ক্যাডার হিসেবে এনআইএ-কে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ এখানেই শেষ নয়, এদিন কুণাল ঘোষ এও বলেন, ‘২৬ মার্চ ২০২৪, এনআইএ-র এসপি ধনরাম সিংয়ের কলকাতার বাড়িতে যান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র সিং। সেখানে তাঁরা একটি লিস্ট দিয়ে দেখিয়ে দেন কোন কোন এলাকায় কাকে গ্রেফতার করতে হবে। সেই অনুযায়ী এনআইএ ঠিক করে তল্লাশি করে সেই জায়গায় আতঙ্ক ছড়িয়ে তৃণমূলের বুথ কর্মী নেতাদের আনবে।’ প্রসঙ্গত, এই একই কথা বলতে শোনা গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। সঙ্গে কুণাল এও জানান, ২৬ মার্চ ৬.৩০ নাগাদ এনআইএ-এর এসপি ধনরাম সিং-এর নিউটাউনের বাড়িতে পৌঁছন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এরপর৬টা ৩০ মিনিট থেকে ৭টা ২২ মিনিট পর্যন্ত তাঁদের এই বৈঠক হয়। এরপরই এসপি ধনরাম সিং-এর বাড়ির ভিজিটারস বুকের কপি তুলে ধরেন কুণাল। সেখানেই নাকি দেখা যাচ্ছে, জিতেন্দ্র তিওয়ারি গিয়েছেন ধনরাম সিং-এর বাড়ি। কুণাল এদিন এও বলেন, পুরনো কেস নিয়ে এজেন্সি নাড়াচাড়া করছে। ভয় দেখাচ্ছে।  এই প্রেক্ষিতে কুণাল এদিন এও দাবি করেন, ‘আমরা অভিযোগ করছি, একটি সাদা প্যাকেটে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছে। তা সত্যি কিনা তদন্ত হোক। পুলিশকে ধনরাম সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করার আবেদন করব। তাঁদের মোবাইল ফোনের লোকেশন খতিয়ে দেখা হোক। সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা ২২, এই সময় তাঁদের ফোন থেকে কোথায় কোথায় ফোন গিয়েছে তা পুলিশকে খুঁজে বার করতে হবে।’

এরপর রবিবারই এক পোস্টে অভিষেক লেখেন, ‘নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি বহাল থাকার মধ্যেও এনআইএ-র সঙ্গে সাজশ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বঙ্গ বিজেপি। এসব সত্ত্বেও চুপ করে রয়েছে নির্বাচন কমিশন।’

এদিকে পালটা সরব হয় বিজেপিও। কুণালের দাবি প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘যেদিন জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে এনআইএ আধিকারিকের সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে কুণাল ঘোষ দাবি করছেন সেদিন কি ভূপতিনগরের বিস্ফোরণ হয়েছিল? তা তো হয়েছিল ২০২২ সালে। আদালতে নির্দেশে তদন্ত চলছে। এগুলো নিয়ে যা অভিযোগ করার তা তাঁরা নির্বাচন কমিশনে করতে পারেন। কিন্তু, এতে ভূপতিনগরের বিস্ফোরণ মিথ্যে হয়ে যাবে না। তা সত্য। সত্য সাময়িক প্রতারিত হতে পারে, কিন্তু, পরাজিত হয় না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =