বেঙ্গালুরুর বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত ২ জন গ্রেফতার দিঘা থেকে

অবশেষে এনআইএ-এর জালে বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে আইইডি বিস্ফোরণে জড়িতরা। এনআইএ সূত্রে খবর, দুই অভিযুক্তকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে তারা। একইসঙ্গে এনআইএ-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, কলকাতার উপকণ্ঠেই, দিঘায় লুকিয়ে ছিল দুই অভিযুক্ত। একটি হোটেলে তাঁরা পরিচয় গোপন করে থাকছিল। এরপর শুক্রবার এনআইএ, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, কর্নাটক ও কেরল পুলিশের যৌথ অভিযান করে অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করে।

এই গ্রেফতারির পর সামনে এসেছে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য়। বিস্ফোরণের বেশ কিছুদিন পর ১৩ মার্চ কলকাতায় এসে ধর্মতলার অদূরে লেনিন সরণির এক হোটেলে রাত কাটান তাঁরা। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ধর্মতলা থেকে মাত্র ২ মিনিট হাঁটাপথে এগোলেই নজের আসে এই হোটেল। লেনিন সরণির ওই হোটেল বেশ পুরনো। বহু মানুষের যাতায়াত রয়েছে সেখানে। ৭০০ টাকা খরচে দিব্য রাত কাটানো যায় সেখানে। সূত্রের খবর, গত ১৩ মার্চ ওই দুই অভিযুক্ত আব্দুল মাথিন ত্বহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব এসেছিলেন কলকাতায়। ভুয়ো আধার কার্ড জমা করেন তাঁরা। সেখানে দুজনের পরিচয় দেওয়া হয় আমল কুলকার্নি ও অপরজনের নাম ইউশা শাহনওয়াজ নামে। হোটেলের ৮ নম্বর ঘরে ছিলেন তাঁরা। হোটেলের রেকর্ড বলছে, গত ১৩ মার্চ বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ঢোকেন তাঁরা, বেরিয়ে যান পরের দিন দুপুর ১২টায়। কলকাতার এই হোটেলে তাঁরা জানিয়েছিলেন, দার্জিলিং থেকে তাঁরা আসছেন, চেন্নাই যাবেন। তবে বিস্ফোরণের দুই অভিযুক্ত কলকাতার হোটেলে রাত কাটিয়ে গেলেন, অথচ কেউ কিছু টেরই পেল না কারণ, সরু গলির মধ্যে থাকা ওই হোটেলে চেক ইনের ক্ষেত্রে তেমন কোনও কড়াকড়ি নেই। এদিকে হোটেলের কর্মীরাও জানান, সন্দেহজনক কিছুই দেখতে পাননি তাঁরা।

ধৃত ২ যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এনআইএ-এর আধিকারিকেরা এও জানতে পেরেছেন, বিস্ফোরণের পরপরই বেঙ্গালুরু রাজ্য পরিহনের একটি বাসে চড়ে শহরের গোরাগুন্টেপালিয়া এলাকায় পৌঁছয় সে। এরপর তুমকুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে আরেকটি বাসে উঠে রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে অন্ধ্র প্রদেশের নেলোরে পৌঁছে যায়। এরপর অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ওড়িশা হয়ে কলকাতায় পৌঁছয় সে। অন্যদিকে সহযোগী ত্বহা ভিন্ন পথে তামিলনাড়ু হয়ে কলকাতায় পৌঁছয়। তবে বিস্ফোরণের পর শাজিব ও ত্বহার মধ্যে ফোনে ক্রমাগত যোগাযোগ ছিল। শেষপর্যন্ত উভয়ই কলকাতা দেখা করে নাম ভাঁড়িয়ে গোপন ডেরায় লুকিয়ে ছিল। সেখান থেকেই কলকাতা ছেড়ে পালানোর ছক কষেছিল তারা। প্রসঙ্গত, মার্চ মাসের ১ তারিখ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে যে আইইডি বিস্ফোরণ হয়েছিল, তাতে আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১০ জন। ৩ মার্চ তদন্তভার গ্রহণ করে এনআইএ। তদন্তে নেমে মুসাভির হুসেন সাজিব নামে এক যুবককেই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল। ঘটনার দিন সে কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে এসেছিল। মুখে মাস্ক পরা ছিল। এই মুসাহির হুসেন সাজিব-ই ইডলি অর্ডার করে। খাবার খেয়ে সে বেরিয়ে যায়। তবে টেবিলের নিচে রেখে যায় ব্যাগটি। মিনিট দশেক পরই ক্যাফেতে বিস্ফোরণ হয়। ঝলসে যান অনেকে। ওই হামলায় মূল অভিযুক্ত ছিল আব্দুল মাথিন ত্বহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব। আব্দুল মাথিন এই বিস্ফোরণকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। কীভাবে বিস্ফোরক রাখা হবে, কতক্ষণ বাদে বিস্ফোরণ হবে এবং তারপর কীভাবে মুসাভির পালিয়ে আসবে-যাবতীয় পরিকল্পনা করেছিল আব্দুলই। বিস্ফোরণের পর থেকেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছিল। অবশেষে তারা ধরা পড়ে এনআইএ-র জালে। এদিকে  এনআইএ সূত্রে  খবরও মিলছে, ধৃত এই দুই যুবক আইএস জঙ্গি মডিউলে সদস্য। জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাঁদের যোগ থাকার কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, আব্দুল মাথিন ত্বহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব ২০২০ কর্নাটক আইএস মডিউলের সদস্য। আইএস মডিউল সামনে আসার পর দু’জনেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ২০২০-তেই। এরপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁরা ফের দেশে ফেরেন। এরপরই চেন্নাইকে কেন্দ্র করে তাঁরা অপারেশনের ছক কষছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৩ লক্ষ টাকা ক্রিপ্টো কারেন্সি মারফত পায় তারা। আইএসকেপি হ্যান্ডলার কর্নেলের কাছ থেকে ওই ক্রিপ্টোকারেন্সি এসেছিল তাঁদের হাতে। এনআইএ-র থেকে এ তথ্যও মিলছে যে, ২ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছিল তাঁদের লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য। অপারেশনের পর ৭ মার্চ পর্যন্ত চেন্নাইতে ছিলেন তাঁরা। তারপর দক্ষিণের কয়েকটি ডেরা ঘুরে আশ্রয় নেন পশ্চিমবঙ্গে। এরপরই পর্যটক পরিচয়ে কলকাতা এবং রাজ্যের একাধিক পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দিঘায় যান আব্দুল মাথিন ত্বহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব। এদিকে এনআইএ সূত্রে এ খবরও মিলেছে যে, এই মডিউলের অধিকাংশ সদস্য আইটি কর্মী বা ইঞ্জিনিয়ার। পাশাপাশি এও জানা গেছে, অভিযুক্ত দুইজনের বিরুদ্ধেই ২০২০ সালে সন্ত্রাসের মামলা রয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশও এনআইএ-কে তদন্তে সাহায্য করছে। গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন যে দক্ষিণ ভারতে বিস্ফোরণের পর সূদূর বাংলায় কেন তারা ঘাঁটি গাড়ল কেন সে ব্যাপারে। সঙ্গে এও প্রশ্ন, এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ভাড়াই বা পেল কীভাবে। ধৃত দুই জঙ্গির সঙ্গে বাংলার কারও যোগাযোগ রয়েছে কিনা বা বাংলায় জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেল সক্রিয় রয়েছে কি না, এই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − one =