বিধায়ক কাঞ্চন ঠিক কোন মাপের অভিনেতা তা বুঝতে গোটা কয়েক ছবি দেখলেই হবে। দু ডিজিটের সংখ্যা না হলেও ক্ষতি নেই। লক্ষ্য করে দেখবেন, যেখানে কাঞ্চন মল্লিক আছেন, তা গোটা চারেক এক্সপ্রেশনের রিপিটেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন কথা হল তিনি তো বিধায়ক। কিন্তু সমাজ নিয়ে কিছু ভেবেছেন বা রাজ্য় নিয়ে? দেশ তো দূর-অস্ত। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, দেশের অর্থনীতি নিয়ে, বাজার নিয়ে, শিল্প বা কৃষি নিয়ে একটা সিরিয়াস কথা শুনেছেন কখনও ওনার মুখে। শোনেননি। তাও উনি বিধায়ক।
বর্তমানে তিনি খবরের শিরোনামে। বিয়ের জন্য। দেশে আইন আছে, বিয়ে আছে, ডিভোর্সও আছে। বিয়ে করাটা বেআইনি নয়, করেছেন। সেখানে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। তবে আম আদমির ওনার বিয়েতে নেমন্তন্ন ছিল না। কেন তা স্পষ্ট নয়। তা নিয়ে জল্পনা হয়েছে বিস্তর। কানাঘুষো শোনা গেছে নানা কথা। এর মাঝে চলে এসেছে লোকসভা নির্বাচন। দেশ জুড়ে নির্বাচন, সংবিধান, সিএএ, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিজেপি বিরোধী জোট, জঙ্গি জাতীয়তাবাদ এসব শব্দের একটার সঙ্গেও পরিচয় কাঞ্চন মল্লিকের আছে কি না সে ব্যাপারে নানা লোকে নানা কথা বলবেন। তবে বিধায়ক যখন তখন তো নির্বাচনে প্রচার করতে হবে। এদিকে তাঁর বিধানসভা এলাকা উত্তরপাড়া পড়ে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে। যেখানে প্রার্থী তৃণমূলেরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রচারে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় চিরাচরিত ভঙ্গিতে হাতজোড় করে ঘুরবেন, তিনি পাশে হাত নাড়াবেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমস্যা বাধল গোড়াতেই। কল্যাণবাবুর নির্দেশ, নেমে যান, আপনার তিনটে বিয়ে করা ইমেজ আমার ভোটারদের কাছে আমার ইমেজ নষ্ট করবে। কাজেই অনেক হয়েছে আর নয়। অন্য কোনও বিধায়ক হলে সঙ্গে থাকত অনুগামী ইত্যাদি। ঝামেলা হতো। কিন্তু কাঞ্চন মল্লিক তো সেই পথের পথিক নন। রাজনীতি, নিজের অর্জিত নয়, মাটিতে লেগে থেকে, লড়ে আসন জেতা যাকে বলে, তিনি তো তা নন। নেত্রীর কৃপাধন্য, ব্যস। কাজেই সুড়সুড় করে নেমে গেলেন প্রচার গাড়ি থেকে। তাছাড়া করারও কিছু ছিল না। তবে এইসব ঘটনা গোপনে হয়নি। সর্বসমক্ষে হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি ভোটের লড়াইয়ে সেমসাইড গোল করে বসলেন কল্যাণ!
এমনিতে কাঞ্চন কল্যাণ সম্পর্ক খারাপ নয়। এলাকায় কান পাতলে শোনা গেছে সন্ধেবেলাতে ওনাদের আলোচনা জমে ওঠে, যেরকমটা প্রায়শই হয়। কাঞ্চনকে বিভিন্ন সান্ধ্য আসরে দেখা যায় কল্যাণের সঙ্গে। পুজোর সময় ধুনুচি নাচেও দেখা গেছে।
ফলে প্রশ্ন এখানেই, তাহলে কি সাম্প্রতিক ডিভোর্স এবং বিয়ে (পড়ুন তিনটে বিয়ে) নিয়ে কাঞ্চনের ইমেজ এতটাই ধূলিস্যাৎ হয়েছে যে যে তাঁকে নিয়ে প্রচারেই বের হতে পারছেন না তৃণমূলের সাংসদ? প্রশ্ন এও উঠেছে, উত্তরপাড়ার ভোটারদের কি রাইট টু রিকল করার ডাক দেবেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়? নাকি সমস্যা কেবল গ্রামের ভোটার নিয়ে? যাঁরা সন্ধেবেলার সিরিয়ালে এর থেকেও অনেক জটিল বিবাহ সম্পর্ক তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন, তাঁরা কি সত্যিই কাঞ্চনের ডিভোর্স বা বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তিত? বা এমনকী যে উনি সঙ্গে থাকলে কল্যাণবাবুর ভোট কমে যাবে? নাকি সমস্যা আলাদা কোনও জায়গাতে নাকি কোথাও কল্যাণবাবু খেই হারাচ্ছেন! উনি খুব প্রাচীনপন্থী গোঁড়া হিন্দু রীতি, সাতজন্মের চিরদিনই তুমি যে আমার গোছের বিশ্বাস নিয়ে চলেন, তাও তো নয়।
তাহলে? আসলে এক নিশ্চিত আসনে, নিশ্চিত জয়ের সামনে দাঁড়িয়েও অসম্ভব নার্ভাস কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এও শোনা যাচ্ছে কিছুদিন ধরেই তিনি তাঁর মেজাজ হারাচ্ছেন, একে তাকে অকারণে ধমক দিচ্ছেন। কাঞ্চন মল্লিককেও সেই নার্ভাসনেসের শিকার হয়েই তিনি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। যদি তাই হয় তাহলে তো ঠিকই আছে। এমন ঘটনা তো এসব দলের মধ্যে লেগেই থাকে। কিন্তু যদি তা না হয়? যদি সিরিয়াসলিই একজন মানুষের বিবাহ আর বিবাহ-বিচ্ছেদই নির্বাচনের ইস্যু হয়ে ওঠে? তাহলে তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। নির্বাচন মানুষের রুজি রুটি, চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। এবার তা যদি এই নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে তাহলে তা চিন্তার বিষয় তো বটেই।