এই প্রথম বঙ্গের লোকসভা ভোটে বামফ্রন্টের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে কংগ্রেস। বিধানসভায় হলেও এই দু’পক্ষের সমঝোতা লোকসভা নির্বাচনে কখনও হয়নি, বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এমনটাই জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সঙ্গে এও জানান, ২০১৬’র বিধানসভার ভোটে নিচের স্তরে সমঝোতা সবটা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এবার বদলেছে পরিস্থিতি। আর সেই কারণেই এক প্ল্য়াটফর্মে আসতে হয়েছে বাম-কংগ্রেসকে।
এই প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এও জানান, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস কর্মীরা অত্যাচারিত বলেই এক জায়গায় এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় এখন সুর বদলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পেতে এখন ইন্ডিয়া জোটে আছি এই কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন মমতা।’ অথচ, এই মমতাই কংগ্রেস দলকে ধ্বংস করার কথা বলছিল এবং কংগ্রেস ৪০টির বেশি আসন পাবে না। কিন্তু এখন তিনি বলছেন যে এর অর্থ কংগ্রেস দল এবং জোট ক্ষমতায় আসছে। এই প্রসঙ্গে অধীর এও বলেন, ‘আমি ওঁকে বিশ্বাস করি না। জোট ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি। তিনি বিজেপির দিকেও যেতে পারেন।’
এর পাশাপাশি মমতাকে কটাক্ষ করে অধীর এও বলেন, ‘চতুর্থ দফা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূল নেত্রী বলতে শুরু করেছেন যে তিনি ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অংশ। বৃহস্পতিবার হলদিয়ার সভা থেকেও তিনি দাবি করেছেন যে তিনি নাকি ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি করেছেন!’ এরই সূত্র ধরে মমতাকে আক্রমণ করে অধীর বলেন, ‘জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হওয়ার পর প্রথম পালান বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তারপর আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। উল্টো দিকে এই ‘ইন্ডিয়া’-জোটের সঙ্গে থাকায় থেকে জেলে যেতে হয়েছে দুই মুখ্যমন্ত্রীকে। একজন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অন্যজন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। কে সুবিধাবাদী তা ভারতের মানুষ দেখতে পারছে।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘হাওয়া উল্টো দিকে বইছে তাই সুর বদলেছেন মমতা। ইট পেতে রাখতে চাইছেন তিনি।’
এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে অধীর রঞ্জন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ৩৭ শতাংশ ভোট আর বিরোধীরা পেয়েছিল প্রায় ৬৩ শতাংশ ভোট। আর এখানেই অধীরের দাবি যে, সহজ পাটিগণিত বলে যদি বিরোধীর একসঙ্গে হয়, তাহলে ৬৩ শতাংশ ভোটের মালিক তারা। ফলে জোটবদ্ধ হলে তাদের জেতার সম্ভাবনা প্রবল। আর এই প্রসঙ্গেই অধীরের বক্তব্য, ‘বিরোধীরা যখন একত্রিত হওয়া শুরু করেছিল তখন সব থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।’
এদিকে এবার প্রথম লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যের আসন সমঝোতা করেছে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট। ২০১৬ এবং ২০২১’র বিধানসভা নির্বাচনের আসন সমঝোতা হলেও এরাজ্যে লোকসভায় আগে কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের আসন সমঝোতা হয়নি। এবার রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনেই এই সমঝোতা হয়েছে। এই প্রসঙ্গ টেনে অধীর চৌধুরী এও বলেন, ‘আগে দেশ এবং সংবিধানকে বাঁচাতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা বাঁচাতে হবে। সেই জায়গায় বামেদের সাথে আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য আছে। আমরা এবং বামপন্থীরা অত্যাচারিত। আমরা উভয়েই অত্যাচারের শিকার। সময় আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে।’