মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্যের জেরে তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে শোকজ করল নির্বাচন কমিশন। এদিকে কমিশন সূত্রে খবর, এই ঘটনায় বিজেপি প্রার্থীকে কমিশনের তরফ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে এই ধরণের মন্তব্য, ‘বিচারবুদ্ধিহীন, শালীনতার সীমা লঙ্ঘনকারী এবং কুরুচিকর’। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের তরফে নির্দেশ, আগামী ২০ মে সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে এই মন্তব্যের কারণ জানাতে হবে।
কমিশন সূত্রে এ খবরও মিলছে যে তাদের পক্ষ থেকে জানতে চেয়েছে, কেন ওই মন্তব্যের জন্য অভিজিতের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে না তা নিয়েও। সঙ্গে কমিশনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কারণ দর্শাতে হবে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। যদি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই নোটিশের জবাব না দেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন ধরে নেবে এই ব্যাপারে তাঁর কিছু বলার নেই। ফলত, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে পদক্ষেপ করা হতে পারে।
এদিকে সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালেই অভিজি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি পাঠায় তৃণমূল কংগ্রেস। সেই চিঠিতে তৃণমূল জানায়, গত বুধবার হলদিয়ার চৈতন্যপুরে একটি সভা ছিল তমলুকের বিজেপি প্রার্থীর। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করে বেশ কিছু অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। সেদিনের বক্তব্যের ভিডিয়ো তুলে দেওয়া হয় কমিশনের হাতে। সঙ্গে তৃণমূলের তরফে কমিশনে জানানো হয়, একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এই ধরণের অশালীন এবং কুরুচিকর মন্তব্য কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হয় না। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা আগেই জানিয়েছিলেন ‘এটা কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। এটা চূড়ান্ত অভদ্রতা। ওঁর সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ তৃণমূল কমিশনকে চিঠিতে জানিয়েছিল, কোনও রাজনৈতিক দল বা দলের প্রার্থী অন্য কোনও প্রার্থী বা ব্যক্তিত্ব বা বিশেষত মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এহেন মন্তব্য চূড়ান্ত অপমানজনক এবং গুরুতর অপরাধযোগ্য। কমিশনের কাছে তাঁরা আর্জি জানায়, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এমনকি, সমস্ত জায়গায় তাঁর প্রচার, সভা, মিটিং-মিছিল বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারেও কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে।
কমিশনের কাছে এই অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে এহেন মন্তব্যের কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি পাঠাল নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের তরফে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই বক্তব্যের ভিডিয়ো প্রমাণ তুলে দেওয়া হয় কমিশনের হাতে। সেগুলিকে যাচাই করেই কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবর। ফলত, নির্বাচনের মুখেই বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হল গেরুয়া শিবিরকে। এদিকে সূত্র বলছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এর আগেও ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সেবারে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বেজে গিয়েছে বলে একটি মন্তব্য করেন। সেবারেও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে এবারের বক্তব্য সমস্ত শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের।