সিএএ বুমেরাং হচ্ছে মতুয়া গড়ে

সিএএ বিল কি ভারতবর্ষে শুধু মতুয়াদের জন্য? সারা দেশের মানুষদের জন্য সংসদে বসে বিরোধীদের সমস্ত সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়ে সরকার একটা আইন পাশ করেছিল, আর সেই আইন পাশ করার চার বছর পরেও তাকে লাগু করাই হচ্ছিল না। কিন্তু তা নিয়ে দেশের আর কোথাও কোনও আলোচনা সম্ভবত হয়নি। সম্ভবত নয়, হয়নি। কোথাও গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও বলতে শোনা যায়নি সিএএ লাগু হবেই। যাচ্ছিলেন তো সর্বত্র। আর সেই আইন আনার পরে, পাশ করানোর পরে এতগুলো রাজ্যের নির্বাচন হয়েছে, একমাত্র বাংলা ছাড়া কোথাও এ নিয়ে একটাও কথা কোথায় খরচ করতে দেখা যায়নি তাঁদের। এদিকে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়েছে একমাসের বেশি হয়ে গেছে। এমনকি এক তৃতীয়াংশ আসনে ভোটও শেষ। এই বাংলা ছাড়া কোথাও বলা হচ্ছে না যে সিএএ আসবেই, আমরা নাগরিকত্ব দেব। বলা হচ্ছে না কারণ এই বাংলার উদ্বাস্তু, গৃহহীন হয়ে চলে আসা সেই মানুষজনদের নিয়ে এক ঘৃণ্য রাজনীতি কেবল এই বাংলাতেই হচ্ছে এবং সেই জঘন্য রাজনীতির অন্যতম খেলোয়াড় এই শান্তনু ঠাকুর।

সারা দেশের নির্বাচনে যা ইস্যু নয় সেই সিএএ নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যে বলেই চলেছেন বনগাঁ আসনের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। কয়েকদিন আগেই তিনি বলেছেন যে ১০ হাজার মতুয়া মানুষজন সিএএ আইন মোতাবেক আবেদনপত্র জমা করেছেন। কিন্তু কোথায় জমা করলেন বা কোন  দফতরে জমা করলেন বা এই ১০ হাজার মতুয়া কারা  তার কোনও বিবরণ তিনি দেননি। কিন্তু এটাও জানিয়েছেন যে উনি কিন্তু আবেদন করেননি। এটাকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই ভাবছেন না সমাজের একাংশ। কারণ, প্রথমত ১০ হাজার তো দূর, দশজন মতুয়া ভোটারকে এনেও হাজির করতে পারবেন না এই শান্তনু ঠাকুর যাঁরা এই আবেদন করেছেন। এই মিথ্যাচারের কারণ খুব পরিষ্কার, এই সিএএ আর নাগরিকত্ব দেওয়ার মিথ্যে বেলুনটা ফেটে গেছে সেদিনেই যেদিন উনি প্রথমে বলে ফেলেছিলেন আমি আবেদন করব।  এরপরে নিজেই আবেদন করেননি। সেদিনেই এলাকা জুড়ে প্রচার চলেছে যে শান্তনু ঠাকুর নিজেই আবেদন করেননি কারণ আবেদন করলে উনি নাকি আর নির্বাচনে দাঁড়াতেই পারতেন না বা দাঁড়ালেই তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যেত।  এই প্রচারের ভিত্তি আছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ আবেদনের প্রথমেই তো আপনাকে জানাতে হচ্ছে যে আপনি অন্য এক দেশের নাগরিক ছিলেন যেখানে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে আপনাকে এদেশে চলে আসতে হয়েছে। ফলে নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। আর আবেদন করলেই যে সেটা তখুনি মেনে নেওয়া হবে এমনও নয়। এখানে আপনি আবেদন করবেন, সেই আবেদনের তথ্যগুলো খতিয়ে দেখা হবে, এবং ততদিন আপনি নাগরিক নন।  যেহেতু নির্বাচনে দাঁড়াতে গেলে দেশের নাগরিকত্ব থাকাটা আবশ্যিক তাই শান্তনু ঠাকুর সিএএ-র আবেদন করেননি। এই ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে আপাতত সিএএ বুমেরাং হয়ে গেছে বিজেপির জন্য। সেই অস্বস্তি থেকেই শান্তনু ঠাকুর আবার একটা নয়া মিথ্যে ভাসিয়ে দিলেন, ১০ হাজার মতুয়া মানুষজন নাকি সিএএ-র জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। মাথায় রাখুন যাঁরা এই আবেদন করবেন তাঁরা এটাও জানেন যে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ভোট দেওয়ার অধিকারটাও চলে যাবে। কাজেই তাঁদের দল বেঁধে আবেদনপত্র ভরানোর জন্য নিয়েও যাবেন না এই শান্তনু ঠাকুর।

এখানে একটা কথা বলতেই হয়, পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের সাধারণ নাগরিকত্ব আইনেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন কারণে নিপীড়িত মানুষজনকে দেশে আশ্রয় দেওয়ার, নাগরিকত্ব দেওয়ার চল সারা পৃথিবীতেই আছে। প্রত্যেক সভ্য দেশে এমন নিয়ম আছে। কোনও এক দেশে গজিয়ে ওঠা স্বৈরতান্ত্রিক সরকার, শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক, সামাজিক, আর্থিক বা ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নিলে মানুষ সে দেশ ছাড়ে, অন্য দেশে যায়, নাগরিকত্বের আবেদন করে এবং পায়ও। কিন্তু সেই আইন কখনও দেশেই থাকা বসবাস করা সেই মানুষজনকে যাঁরা দেশের সরকারকে নির্বাচিত করেছে তাদেরই নাগরিকত্ব দেব বলে ভাঁওতা দেয় না। সেই ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছিল ভোটের জন্য, তা এখন মানুষের কাছেও পরিষ্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 1 =