ডাঃ পার্থ মুখোপাধ্যায়
আসছে বর্ষার মরশুম। আর বর্ষাকাল আসা মানেই সঙ্গে হাজারো রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। কারণ, বৃষ্টির জলে ভিজে সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে, জলবাহিত রোগের শিকার হতে হয় বাচ্চাদের। তাই বাচ্চাদের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বর্ষায় শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে হলে,
১) পোশাক-পরিচ্ছদ- নজর দিতে হবে পোশাক পরিচ্ছদে। কারণ, বর্ষার সময় আবহাওয়া পরিবর্তন হতে থাকে। সকালের দিকে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকে। আবার রাতে মনোরম বা ঠাণ্ডা আবহাওয়া। তাই দিনের বেলায় বাচ্চাদের নরম ও হাল্কা জামা কাপড় পরান। আবার রাতের দিকে মোটা, ফুল স্লিভ কাপড় পরালে তাঁদের শরীর গরম থাকবে।
২) উষ্ণ এবং শুষ্ক রাখুন- বাড়ির পরিবেশ ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে তা সংক্রমণের সম্ভাবান বৃদ্ধি করতে পারে। বাইরে বেরোনোর সময় বাচ্চাদের রেনকোট ও ছাতা নিয়ে যেতে বলুন। তবে কোনও কারণে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তারা ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিন এবং শুকনো জামাকাপড় পরিয়ে দিন।
৩) ঘন ঘন ডায়পার পাল্টাতে হবে- বাচ্চাদের মধ্যে মনসুনের সময় বার বার প্রস্রাবের প্রবণতা থাকে। বাড়িতে কোনও নবজাতক বা শিশু থাকলে এবং তাঁরা সর্বক্ষণ ডায়পার ব্যবহার করলে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। ঘন ঘন সেই ডায়পার পাল্টাতে থাকুন। তা না-হলে ভিজে, স্যাঁতস্যাঁতে ডায়পারের কারণে তাদের ফাঙ্গাল ইনফেকশানও হতে পারে।
৪) মশা থেকে নিরাপদে রাখতে হবে– বর্ষাকালে মশারা প্রজনন করে থাকে। এ কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। তাই বাচ্চাদের ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। এ সময় বাচ্চাদের ঢিলেঢালা, ফুল স্লিভের জামা কাপড় পরানো উচিত। ত্বক যত কম বাইরে থাকে তত ভালো। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারিও টাঙিয়ে রাখতে পারেন। বেশি বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মসকিউটো রেপেলেন্ট ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫) ডাইরিয়া প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে– বৃষ্টি ও বন্যার কারণে পানীয় জলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। অপরিষ্কার জল পানের ফলে ডাইরিয়ার ইনফেকশান হতে পারে। তাই সব সময় ফিল্টার করা জল ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়াও জল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করতে পারেন। ডাইরিয়া থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য বাচ্চাদের বার বার হাত ধুতে উৎসাহিত করুন। বর্ষাকালে তাঁদের বাইরের খাবার খেতে দেবেন না।
৬) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা- বর্ষাকালে কাদা জল, কাদা, বর্ষার জল বা নোংরা মেঝে পরিষ্কার করা অত্যন্ত কঠিন। তবে বাচ্চারা বাড়িতে এলেই তাঁদের হাত-পা ধোয়াকে অবশ্য পালনীয় কর্তব্যে পরিণত করুন। আবার বর্ষাকালে অন্তত দুবার মেঝে পরিষ্কার করুন। মেঝে পরিষ্কার করার সময় জলে অ্যান্টিসেপ্টিক মিশিয়ে নিতে ভুলবেন না। বাচ্চাদের পোশাক হতে হবে পরিষ্কার। প্রতিদিন তাদের মোজা ধুতে হবে। আবার সপ্তাহে অন্তত একবার বাচ্চাদের সমস্ত খেলনা ধুয়ে নিন।
৭) পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে- বাচ্চারা যাতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে সে বিষয় লক্ষ্য। রাখুন। বর্ষাকালে স্ট্রিট ফুড খাবেন না। এ সময় সবুজ শাক-সবজি এবং কলা, বেদানা, পেঁপের মতো মরশুমি ফল তাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন। এর পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় অবশ্যই বিট রাখবেন। বিট অ্যান্টি অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। তবে আগে থেকে কেটে রাখা ফল ও স্যালাড খেতে দেবেন না। বর্ষাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর ও উল্লেখযোগ্য খাবার হল ড্রাই ফ্রুটস।
৮) ফ্লু থেকে নিরাপদে থাকুন- নিজের সন্তানের ভ্যাকশিনের তারিখ ভুলে যাবেন না। ফ্লু থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায় হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেওয়া।