দূষণের কালো দাগ মুছল কলকাতার ওপর থেকে। দেশের সবথেকে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম কুড়িতে আর নাম নেই কলকাতার। আর এই ফল সামনে আসতে খুশি মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন, ১৩১টি দূষিত শহরের মধ্যে প্রথম ২০তে কলকাতা ছিল একসময়। এমনকি, ২০১৯ সালে দেশের সবথেকে দূষিত ১০টি শহরের মধ্যে ছিল কলকাতা। সেই দুর্নাম ঘোচাতে পেরেছে কলকাতা। এই প্রসঙ্গে মেয়র এও জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কলকাতাকে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।। কলকাতা শহরের বায়ু ৪০ শতাংশ উন্নত করা সম্ভবপর হয়েছে। কলকাতা পুরসভা যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে, অন্যান্য মেট্রো শহর তার ২৫ শতাংশও করতে পারেনি।
বায়ু দূষণের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে বোস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান মেয়র। তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শেই কলকাতা পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজে আমূল বদল আনা হয়েছে। দূষণ ছড়ানো যানবাহনগুলিকে পুরসভার কাজকর্ম থেকে একেবারে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, ১৫ বছরের পুরনো সমস্ত গাড়ি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তার বদলে বাড়ানো হয়েছে বৈদ্যুতিন গাড়ির ব্যবহার।’
এছাডা়ও শহরের বায়ু দূষণ রোধে আরও একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতায় দূষণবৃদ্ধিকারী শিল্পের উপরেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। আগামী দিনে শহরকে আরও দূষণমুক্ত করতে কলকাতাবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদনও জানান তিনি।
এই প্রসঙ্গে ফিরহাদ জানান, ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম অর্থাৎ এনক্য়াপ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতা দেশের সবথেকে ১০টি দূষিত শহরের একটি বলে চিহ্নিত হয়েছিল। এটা আমার হৃদয় গর্বে ভরে যাচ্ছে এটা জেনে যে দেশের ২০টি দূষিত শহরের মধ্যেও কলকাতার নাম নেই!’ উল্লেখ্য, দেশের দূষিত শহরগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে দিল্লি, গুরগাঁও, মুম্বাই, ফরিদাবাদ-এর মতো শহরগুলি।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ডঃ কল্যাণ রুদ্র জানান, ‘আমাদের শহরে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বেশি দূষণ হয়। দূষণ কমাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ট্রান্সবাউন্ডারি এয়ার পলিউশন আমাদের এখানে বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ, উত্তুরে হাওয়ার কারণে বাইরে দেখে দূষিত পদার্থ আমাদের শহরে এসে ঢুকছে। এছাড়াও শহরে প্রায় অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারে বা দোকানে কয়লার আঁচের উনুনে রান্না হয়। প্রায় ৬ হাজার পরিবারকে বিকল্প রান্নার উনুন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শীতকালে রাস্তা ধুইয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কলকাতা পুরসভাকে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক শিল্পগোষ্ঠীকে এই ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া বীরভূমের উত্তর প্রান্ত থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত একটি গ্রিন শিল্ড তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রায় ৮০০ কিমি বিস্তৃত এই গ্রিন শিল্ড-এর কাজ শুরু হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ হলে আমাদের রাজ্যে দূষণের মাত্রা আরও খানিকটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।’