পার্থ রায়
পুলিশের অকর্মণ্যতার জেরে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় এবার আদালতে তলব করা হল রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। প্রসঙ্গত, ২০২২-এর অগাস্টের ট্রেন বন্ধের জেরে যাত্রী বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল বছর চৌষট্টির বৃদ্ধ স্বপন কুমার হাজরাকে। তবে আদালত থেকে তিনি জামিন পান দিন কয়েকের মধ্যেই। তবে মুক্তি মেলেনি। কারণ, যে হাজার টাকা বেল বন্ড হিসেবে জমা দেওয়ার কথা ছিল তা তিনি জমা দিয়ে উঠতে পারেননি। এদিকে পরিবারও ঘুণাক্ষরে জানতেই পারেনি এই গ্রেফতারি এবং তারপর দীর্ঘ জেল-জীবনের কথা। এরপর নয় মাস জেলবন্দি থাকার পর মৃত্যু হয় দমদম জপুর রোডের বাসিন্দা স্বপনকুমার হাজরার। সূত্রে খবর, জেল থেকে হাসপাতালের পথে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপরই খবর পৌঁছয় বাড়িতে। আসে দেহ নিয়ে যাওয়ার বার্তা। স্বপনের বাড়ির ঠিকানা যে পুলিশের জানা ছিল তা তাঁর মৃত্যুসংবাদ বাড়িতে পৌঁছনোতেই প্রমাণিত। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে নিয়ম মেনে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন জানানো হলো না তাঁর পরিবারকে। প্রশ্ন ওঠে, জামিন পেয়েও বন্দি থাকা একজনের বেল বন্ডের টাকা মিটিয়ে তাঁকে মুক্ত করার সুযোগ কেন পেল না পরিবার। আর এই প্রশ্ন তুলে এবং সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটির রহস্যমৃত্যুর বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারের কাছে আর্জি জানান স্বপনের স্ত্রী স্বাতী।
প্রসঙ্গত, ২০২২-র অগস্টের শেষ দিকে বই ক্যানভাসিংয়ের কাজে বেরিয়েছিলেন স্বপন। প্রাথমিক গন্তব্য ছিল মালদা। কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করতেন। মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। যখন একটু সুস্থ থাকতেন, কাজে বেরোতেন নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষটি। ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ৬ তারিখ কয়েক বার ফোন বেজে গেলেও সাড়া মেলেনি।
সমগ্র এই ঘটনা রাজ্য সরকারের কাছে জানানো হলেও সরকারের তরফ থেকে কোনও উত্তর পাননি স্বাতী দেবী। এরপর আইনজীবী কৌশিক গুপ্তর সহযোগিতায় মামলা করেন হাইকোর্টে। প্রাথমিক শুনানিতে গত ২ মে সরকারি ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। নাগেরবাজার থানায় পরিবারের পক্ষে দায়ের মিসিং ডায়েরির সূত্রে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি-র কাছে রিপোর্ট তলব করে আদালত। এরপর মঙ্গলবার ডিসি-র দায়সারা রিপোর্ট দেখে প্রবল অসন্তুষ্ট বিচারপতি সরাসরি রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেন। ১৪ জুন সেই রিপোর্ট দেখে আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ করবে বলে আদালত সূত্রে খবর।