কাজল সিনহা
শনিবার ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের আগে দেবের বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। এদিকে ২৫ মে রাজ্যের যে সমস্ত কেন্দ্রে ভোট হবে তার মধ্যে অন্যতম ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র। যেখানে তৃণমূলের দেবের সঙ্গে বিজেপির হিরণের হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রথম থেকেই এই নির্বাচন ঘিরে দেব ও হিরণের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে। এরই মাঝে মেদিনীপুরের এক নির্বাচনী সভায় গিয়ে দেবকে নিয়ে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আগামী ২৩ তারিখ সকালবেলা ঘাটালের প্রার্থীর সম্পর্কে আমি এমন জিনিস ছাড়ব, আর ওদিন ঘর থেকে বেরবেন না। ২৩ তারিখ সকাল বেলা। ফলো করবেন। ৯টার সময়, এক্স হ্যান্ডেলে।’ এরপর বৃহস্পতিবার ঠিক ৯টায় এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু দেবকে নিয়ে পোস্ট করলেন ডায়রির পাতা। সেখানে শুভেন্দুর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে এনামুল হকের কাছে থেকে নাকি টাকা গিয়েছিল দেবের অ্যাকাউন্টে। একইসঙ্গে পোস্টে আপলোড করলেন একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার নথি। পাশাপাশি গত ২৫.০১.২০১৭ তারিখের কিছু টাকা পয়সার লেনদেনের হিসেবও তুলে ধরা হয়েছে শুভেন্দুর এই পোস্টে। বিরোধী দলনেতার পোস্টে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে। নাম উঠে আসছে ‘আরণ্যক ট্রেডার্স’ নামে একটি সংস্থার। শুভেন্দুর দাবি, এই সংস্থা এনামুল হকের। তাঁর অভিযোগ, দু’দফায় দেব পেয়েছিলেন ৫০ লক্ষ টাকা। তবে একা শুভেন্দু নন। বিরোধী দলনেতা এক্স হ্যান্ডেলে এই ছবি পোস্ট করতেই এই ঘটনায় মুখ খোলেন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও।বলেন, ‘এটা ওঁর নিজের ব্যালেন্স শিট। ২০১৬ সালে তিনি জমা করেছেন। এই কারণে ইডি সাড়ে আট ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিল। আর উনি যে বলছেন টাকা ফেরত দিয়েছেন, টাকা নিলে তো টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর এতদিন ধরে বলছিলেন আপনি কাউকে চেনেন না। এনামুল এখন রয়েছেন তিহাড়ে। তাঁর ডায়রির পাতা এগুলো। সেখান থেকেই ইডি পেয়েছে। আজ সারা বাংলা দেখুক কে সত্যি কথা বলছে।’
প্রসঙ্গত, গরুপাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের সঙ্গে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবের নাম আগেই জড়িয়েছিল। এই নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে তলব করেছিল। হাজিরাও দিয়েছিলেন দেব। এবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন দেবের বিরুদ্ধ।
শুভেন্দুর এই পোস্টের পাল্টাও দেন দেব। তিনিও পোস্ট করেন একটি শোয়ের পোস্টার। যেখানে অন্যান্য অভিনেতা, অভিনেত্রীদের সঙ্গে রয়েছেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ও নাম। দেব তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘ও শুভেন্দু দা, তুমি নাকি কোথায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছো, হিরণের পাল্লায় পড়ে তোমাকে তো কাউন্সিলরে নামিয়ে দিচ্ছে।ভালোবাসি বলে বললাম, আমিও জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। আর রইলো কথা গরু চুরির টাকা,তোমার কোলের ছেলে হিরো হিরণ সেও পিন্টু মন্ডলের থেকে টাকা নিয়েছেন,তাহলে `উনিও..’।
একইসঙ্গে দেব এও জানান, ‘শুভেন্দুদার পোস্টটা দেখে কাকে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না। হিরণকে নাকি শুভেন্দুদাকে। আমি হিরণকে দিয়েই শুরু করি। আড়াই বছর ধরে মনের মধ্যে অনেক কথা জমে ছিল। প্রথমেই বলব, কোনও এজেন্সি নিয়ে যখন তদন্ত হয়, তখন সেই তদন্ত নিয়ে বেশি কথা বলা যায় না। আমি খুব আশ্চর্য হলাম এই যে ইডি-সিবিআইয়ের কাছে যে তথ্যপ্রমাণগুলো ছিল, সেটা শুভেন্দু অধিকারীর হাতে কেন এবং কীভাবে এল। এটা শুধুই ইডি বা সিবিআইয়ের কাছে থাকা উচিত কিংবা হোম মিনিস্ট্রির কাছে থাকা উচিত, বা কোর্টের কাছে থাকা উচিত। এই চারজনের বাইরে আমার মনে হয় এই তথ্য আর কারও কাছে যাওয়া উচিত নয়। এগুলো খুবই গোপন নথি।’ একইসঙ্গে দেব এও জানান, ‘এর থেকে স্পষ্ট, শুভেন্দু অধিকারীর কাছে সোর্স রয়েছে। তাছাড়া, আমি আগেও বলেছি, যে টাকাটা আমি নিয়েছিলাম, সেটা আমি ফিরিয়েও দিয়েছি। সেই তথ্যও আমি সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করব।’