বিজেপি-র মৃত্য়ুঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন মমতা

প্রাকৃতিক দুর্যোগও রুখতে পারে না তৃণমূল সুপ্রিমোকে। এটাই তো তাঁর ইউএসপি। রবিবার প্রচণ্ড তাণ্ডবের পরও সোমবার কলকাতার বুকে ছিল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব। এমনই এক আবহে বৃষ্টিভেজা রাস্তা ধরে উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে রোড শো করতে দেখা গেল মমতাকে। সভায় বক্তব্য রাখার পর বেলেঘাটা গান্ধিমূর্তি থেকে হাঁটা শুরু করেন মমতা। তবে এর শুরুতেই বাজান ‘মৃত্যুঘণ্টা’। এই প্রতীকী মৃত্যুঘণ্টা বিজেপির জন্য। প্রসঙ্গত, ঘণ্টার গায়ে লেখা ছিল বিজেপি।

তবে এদিনের এই ঘটনা উস্কে দিল ৩২ বছর আগের ব্রিগেডের স্মৃতিকে। সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, হয়নি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন যুব কংগ্রেসের নেত্রী। ব্রিগেডের সভায় ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজিয়েছিলেন। বাম শাসনের প্রতীকী ছিল সেই ‘মৃত্যুঘণ্টা’। আর এই ‘মৃত্যুঘণ্টা’ তৈরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন পরেশ পাল। এরপর সময় গড়িয়েছে। ২৪-এর নির্বাচনী আবহে আবারও সামনে এলে সেই ‘মৃত্যুঘণ্টা’। সভাস্থল সেই পরেশ পালেরই এলাকা বেলেঘাটা। নেপথ্যে সেই পরেশ পাল। সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে সুদীপের প্রচারে গিয়েই স্বর্ণকমল সাহা ও পরেশ পালের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় মমতার। তখনই ৩২ বছর আগের ‘মৃত্যুঘণ্টা’র প্রসঙ্গ উঠে আসে। এরপরই দলের তরফে পরেশকে ‘মৃত্যুঘণ্টা’ তৈরির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে এই ঘটনায় আরও একটি প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে, পরেশকে দিয়ে ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বানিয়ে কোন নতুন কোনও বার্তা পরেশকে তৃণমূল সুপ্রিমো দিতে চাইলেন কি না তা নিয়েও। কারণ, কানাঘুষো শোনা যায়, সুদীপের সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পরেশ গোষ্ঠীর। সেই কারণেই কি পরেশকে বার্তা দিতে চাইলেন মমতা? বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপির ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজাতে গেলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে?

এদিকে নির্বাচনী আবহে উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কম বিতর্কও হয়নি। দলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সুদীপের সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ সামনে এনেছিলেন। আর এবার ভোটের ঠিক আগে আবারও একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়। সেই ছবিতে যে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেখা যাচ্ছেন, তা সুদীপের বলাও দাবি করা হয়। মাড়োয়ারি ও মুসলিম সম্পর্কে বিশেষ মন্তব্য রয়েছে সেই সোমবার সুদীপের প্রচারে গিয়ে এই ইস্যুতেই সরব হতে দেখা যায় মমতাকে। এদিন বড়বাজারে প্রচারে গিয়ে মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওরা সুদীপের ফেক ভিডিয়ো বানাচ্ছে। ফেক ছবি ছড়াচ্ছে। তবে কোনও ছবি বা ভিডিয়োর কথা বলছেন, তা উল্লেখ করেননি মমতা। সেই সঙ্গে মমতা এও বলেন, ‘মাড়োয়ারিদের ভালোবাসি। ওঁরা আমাকে খুব সম্মান করেছেন। ওঁদের সঙ্গে মিটিং করেছি সল্টলেকে।’ একই সঙ্গে মমতা বলেন,  “বিহারীদেরও ভালবাসি। আমিও লিট্টি খাই। মা গঙ্গার পুজো করি। আপনারা (বিহারি, রাজস্থানি) এখানে সারাবছর কাজ করবেন আর আমাদের ভোট দেবেন না তা কি হয়?’  পাশাপাশি এও বলেন, ‘দুখ: থাকলে থাপ্পড় মারুন। কিন্তু ভোট কংগ্রেসকে দিলে বিজেপির সুবিধা হবে।’ এরই পাশাপাশি এদিন বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়কে বিদ্ধ করে মমতা এও বলেন, ‘ইডি-সিবিআই তল্লাশি চালাতে, ভয় পেয়ে বিজেপিতে গিয়েছে।’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, বিজেপির প্রার্থী সুদীপদার অনিষ্ট চায়। সুদীপদাকে জেলে পাঠায়।

এরই পাশাপাশি এদিনের মঞ্চ থেকে  ১ জুন যে বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে ইডি-জোটের তরফ থেকে সেই  বৈঠকে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, ওইদিন তাঁর পক্ষে বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ‘রাজ্যে এখন রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের দুর্যোগ হয়েছে। মানুষ ত্রাণ শিবিরে আছে। তাদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি এখন হয়তো নির্বাচনী প্রচার করছি কিন্তু আমার মন ত্রাণ শিবিরে পড়ে রয়েছে। ১ জুন শেষদফার ভোটের বিষয়টি দেখতে হবে।’ তবে সশরীরের উপস্থিত না থাকলেও তাঁর হৃদয় মোদি বিরোধী জোটের বৈঠকেই থাকবে, বললেন মমতা। একইসঙ্গে বিজেপিকে তুলোধোনা করে বলেন, ‘মোদি ক্ষমতায় ফিরবে কি না জানা নেই। তবে মোদি ক্ষমতায় না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =