ডাঃ তমাল বিশ্বাস
হাই ব্লাড প্রেশার একটি জটিল অসুখ। এই রোগের ফাঁদে পড়লে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো জটিল অসুখ নিতে পারে। তাই চেষ্টা করুন ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার।
এখন কথা হল এই ব্লাড প্রেশার কি? রক্তনালীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় আর্টারির অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে রক্ত যে চাপ তৈরি করে, তাকেই বলা হয় ব্লাড প্রেশার।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমাদের শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপ হল ১২০/৮০ এমএম এইচজি। তবে কোনও কারণে ব্লাড প্রেশার ১৩০/৯০ এমএম এইচজি-এর গণ্ডি ছাড়িয়ে গেলে তাকে হাই ব্লাড প্রেশার হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। আর দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতে শহরাঞ্চলের ৩৩ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামের প্রায় ২৫ শতাংশ বাসিন্দা ইতিমধ্যেই হাই ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন বলে জানাচ্ছে এনসিবিআই।
ফলে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে সবার প্রথমে ওজন কমাতে হবে। কারণ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শরীরে মেদের বহর বাড়লেই ব্লাড প্রেশার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
এক্ষেত্রে ওজন কমাতে চাইলে সবার প্রথমে তেল, মশলা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। তার পরিবর্তে ফাইবার রিচ খাবার খান। সেই সঙ্গে প্রতিদিন ৩০ দিন ব্যায়াম মাস্ট। ব্যস, তাতেই উপকার মিলবে হাতেনাতে।
এছাড়াও আমাদের মধ্যে অনেকেই ভাতের পাতে কাঁচা নুন খান। এমনকী ফল, চপ, সিঙারার উপর বিট নুন ছড়িয়ে রসনাতৃপ্তি করা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আর সাধারণ জনগণের এহেন নুন প্রীতিই কিন্তু প্রেশার বাড়ায়। কারণ নুন হল সোডিয়াম। আর সোডিয়াম শরীরে জল ধরে রাখে। যার ফলে বাড়তে থাকে ব্লাড প্রেশার। তাই হাইপারটেনশনের মতো জটিল অসুখ প্রতিরোধ করতে চাইলে নিয়মিত নুন খাওয়ার ভুল শুধরে নিন।
এছাড়াও অতি লোভনীয় বিরিয়ানি, রোল, চাউমিন, চপ, বার্গার, পিৎজার মতো খাবারে রয়েছে নুনের ভাণ্ডার। সেই সঙ্গে এসব খাবারে খুব বেশি পরিমাণে তেল, মশলাও মেশানো থাকে। আর এসব উপাদান কিন্তু শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমনকী এসব উপাদানের কারসাজিতে বাড়তে পারে প্রেশার। তাই প্রায়দিন ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আজ থেকে শুধরে যান। তার বদলে বাড়ির তৈরি খাবারের উপর রাখুন আস্থা। ব্যস, এই নিয়মটা মেনে চললেই আপনাকে আর হাই বিপি-এর ফাঁদে পড়ে কষ্ট পেতে হবে না।
আমাদের অতি পরিচিত সব ফল, শাক, সবজিতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের ভাণ্ডার। আর এই দুই খনিজ কিন্তু ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই আর সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই পাতে মরশুমি সব ফল, শাক, সবজিকে জায়গা করে দিন।
সেই সঙ্গে খেতে হবে দুধ, পনির, ছানা, দইয়ের মতো দুগ্ধজাত সব খাবার। কারণ যে কোনও দুগ্ধজাত খাবার হল ক্যালশিয়ামের খনি। আর এই খনিজও রক্তচাপকে বাড়তে দেয় না। তাই ঝটপট এসব খাবারের সঙ্গে পাতিয়ে নিন বন্ধুত্ব।
একইসঙ্গে চিকিৎসকেরা এও জানাচ্ছেন, পর্যাপ্ত সময় ঘুম না হলে ব্লাড প্রেশার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই এই রোগের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইলে দিনে অন্ততপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা শান্তির ঘুম দরকার।
ঠিক একই ভাবে চেষ্টা করতে হবে স্ট্রেস কমানোর। কারণ দুশ্চিন্তা করলে শরীরে এমন কিছু হরমোন বেরয় যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনারও যদি সারাক্ষণ টেনশন করার অভ্যাস থাকে, তাহলে আজ থেকে প্রাণায়াম, মাইন্ডফুলনেস করুন। ব্যস, তাতেই উপকার মিলবে হাতেনাতে।