বরানগরে প্রেস্টিজ ফাইট সায়ন্তনী-সজলের আর ঘুরে দাঁড়াতে চান তন্ময়

তাপস রায়ের ইস্তফায় খালি হয় বরানগর আসনটি। এর পর বিজেপিতে যোগদান করেন তিনি। বিজেপিতে যোগদান করেই উত্তর কলকাতা থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হন তাপসবাবু। এদিকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে সজল ঘোষের নাম প্রায় ঠিক ছিল। কিন্তু শেষ বেলায় দলবদল করে তাঁর মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নেন তাপস রায়। তবে তাতে মোটেও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি সজল। বরং তাপসবাবুকে দু’হাত খুলে স্বাগত জানান। এরপর সেই সজলকে বরানগরে প্রার্থী করে বিজেপি।

অন্যদিকে বরানগরে ‘ঘরের ছেলে’ ও প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করে সিপিএম। ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

তন্ময় এর আগে উত্তম দমদমের বিধায়ক ছিলেন। ২০১৬ সালে তৃণমূলের চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও বিজেপির অর্চনা মজুমদারকে হারিয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। এর পর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তন্ময়কে আবার উত্তম দমদমেরই প্রার্থী করে দল। কিন্তু সেবার চন্দ্রিমার কাছে পরাজিত হন তিনি।

সিপিএমের একটি সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটে দমদম আসনের প্রার্থী হিসাবে তন্ময়ের নাম ভাবা হয়েছিল। তন্ময়ের নিজেরও ইচ্ছা ছিল। কিন্তু জেলায় দলের তন্ময়-বিরোধী গোষ্ঠীর চাপে তা সম্ভব হয়নি। প্রার্থী করা হয় সুজনকে। অর্থাৎ, উত্তর ২৪ পরগনাতে এই মুহূর্তে তন্ময়ের জনপ্রিয়তায় লেগেছে ভাটার টান। কারণ, গত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের বেনজির বিপর্যয়ের পরে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন তন্ময়। প্রকাশ্যে দলের নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দাগায় তিন মাস মুখ খুলতে সেন্সর করা হয় তাঁকে। বিধানসভা নির্বাচনে ব্যর্থতার দায় দলীয় নেতৃত্বের ঘাড়ে চাপিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘দলের এই ব্যর্থতার দায় নেতৃত্বের। আমাদের নয়। নিচুতলার কর্মীদেরও নয়। লোকসভায় শূন্য হয়ে যাওয়ার পরেও সেই দায় কেউ নেননি। বিধানসভায় হারের পরেও কেউ দায় নেবেন না। শুধু স্তালিন কপচালে হবে না। এটা স্তালিনের যুগ নয়।’ শুধু তাই নয়, বামফ্রন্টের সঙ্গে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর জোট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তন্ময়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে টিভির পর্দায় দেখা যায় তন্ময়কে। অংশ নেন বিতর্ক সভাগুলিতে। সেই তন্ময়কে বরানগরবাসী কতটা আপন করে নেবেন সেটাও দেখার।

অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ৪২ নামের মধ্যে ঠাঁই হয়নি সায়ন্তিকার। এরপর তা নিয়ে মুখ খোলেন অভিনেত্রী। তাঁর অভিমানপর্ব যখন বঙ্গ রাজনীতির ‘হট টপিক’ হয়ে উঠেছিল, তখনই কিছুটা ড্য়ামেজ কন্ট্রোল করতেই তাঁকে প্রার্থী করা হয় বরানগরের। তবে সায়ন্তিকার নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর  বরানগরের তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্চিতা দে-র বক্তব্য ঘিরে পড়ে শোরগোল। সঞ্চিতা পোস্টে লেখেন, ‘বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আমরা কোনও সেলেব্রিটি বা অভিনেতা অভিনেত্রী চাই না। আমরা চাই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি আমাদের প্রার্থী হোন। যিনি আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের হয়ে লড়াই করবেন। রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া এই লড়াই লড়া খুব সহজ হবে না।’যদিও হইচই পড়তেই পোস্টটি উধাও হয়। সঙ্গে সঞ্চিতা জানান, আবেগের বশে ফেসবুকে পোস্টটি করেছেন তিনি।

ফলে সায়ন্তিকার প্লাস পয়েন্ট গ্ল্য়ামার, মিতভাষী, মিশুকে, সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা  হলে সজল এগিয়ে তাঁর  স্লগওভার চলে চোখা আক্রমণ, ডাকাবুকো পদক্ষেপ, পুজোর আয়োজনে ষোলআনা নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দিতে নারাজ। আর সেখানে বামপ্রার্থী তন্ময়ের রয়েছে দীর্ঘকালের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা।

ফলে বরানগর উপনির্বাচনে লড়াইটা মূলত ত্রিমুখী। বরানগরের উপনির্বাচনে বামেদের জন্য লড়াইটা শূন্য থেকে ১-এ পৌঁছনোর আর  অন্য দুই দলের জন্য ‘প্রেস্টিজ ফাইট’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 17 =