সন্দেশখালিতে বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের

হিংসা আর অশান্তির বাতাবরণ থেকে কোনও মতেই যেন বের হতে পারছে না সন্দেশখালি। রবিবার রাতে সন্দেশখালিতে এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে ৷ হামলার হাত রেহাই পাননি ওই বিজেপি কর্মীর স্ত্রীও ৷ স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে মার খান তিনি ৷ বিজেপি কর্মী স্ত্রীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে আতঙ্কিত বিজেপি সমর্থক ওই দম্পতি বাঁশ, লাঠি, কোদালের বাঁট দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বিজেপি সমর্থক ওই দম্পতিকে ৷ সঙ্গে এও বলেন, ‘হামলাকারী তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়ে বলেছে, 4 জুন ভোটের ফলাফল বেরনোর পর বাড়ি থেকে বের করে কোপাবে আমাদের ৷ কী হবে ? বাঁচার কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছি না ৷ প্রশাসনের কাছে আবেদন আমাদের বাঁচান ৷’ এই ঘটনার জেরে সোমবার সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালির খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ৷ পাল্টা গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধেও হামলার অভিযোগ আনে শাসক শিবির ৷

সপ্তম দফার ভোটে দিনভর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত সন্দেশখালি ৷ হামলা, মারধর, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ, অবরোধ কিছুই বাদ যায়নি সেদিন ৷ সেই রেশ এখনও চলছে ৷ রবিবারও সন্দেশখালির আগারহাটিতে গ্রামে পুলিশের অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ পুলিশ-র‍্যাফকে ঘিরে রীতিমতো তাঁদের ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামের মহিলারা ৷ এমনকি, ধাওয়া করে পুলিশের গাড়ি থেকে আটক করে এক গ্রামবাসীকে ছিনিয়েও নেন মহিলারা ৷ সেই ঘটনায় নিয়ে রীতিমতো তেতে ছিল আগারহাটির মণ্ডল পাড়া ৷

এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ৷ বিজেপির যুব মোর্চার বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পলাশ সরকার জানান, ‘ওই দম্পতি বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী ৷ খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপ্লব বর্মনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের দুষ্কৃতী দল হামলা চালিয়েছে সেখানে ৷ বসিরহাট-সহ গোটা রাজ‍্যে তৃণমূলের হার নিশ্চিত জেনেই, ভোট পরবর্তী হিংসা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলের লোকজন ৷ এঁদের বলব এখন থেকেই সাবধান হয়ে যান ৷ নইলে কপালে দুঃখ আছে ৷’

যদিও, যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছেন খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপ্লব বর্মন ৷ তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে তৃণমূলের নাম টেনে আনা হচ্ছে ৷ আমরা এই ধরণের ঘটনায় বিশ্বাসী নই ৷ বিজেপিই হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে ৷’

এদিকে বসিরহাটে নির্বাচনের দিন হিংসার ঘটনায় সন্দেশখালিতে আরও সাতজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতরা হলেন, দীনেশ বারিক, পরিতোষ সর্দার, চিরঞ্জিৎ সর্দার, কৃষ্ণ সর্দার, দিলীপ সর্দার, মিহির হালদার এবং সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই ধৃতদের বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের সবাই বিজেপি কর্মী। আগেও পাঁচজনকে এই কারণে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশের উপর আক্রমণ করার জেরে মোট গ্রেফতার সংখ্যা দাঁড়াল ১২।

অন্যদিকে সন্দেশখালি থানার এসআই সাগির গাজির উপর হামলা করার ঘটনায় রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। গত ১ জুন সপ্তম দফার ভোটের দিনও রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। তাই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মামলাতেও বিজেপি প্রার্থীর এফআইআরে আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এখন সন্দেশখালির পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য রবিবার থেকে ভোটের ফলপ্রকাশের দিন পর্যন্ত বেশিরভাগ জাযগায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =