লোকসভা নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর অশান্তির আঁচ ছড়াচ্ছে বঙ্গের নানা জায়গায়। বঙ্গের স্য়াফ্রন ব্রিগেডের অভিযোগ, পাত্রসায়ের ব্লকের নারায়ণপুরে বিজেপির দলীয় কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এমনকি পাত্রসায়র ব্লকের কাঁকরডাঙ্গা সংলগ্ন এলাকায় বিজেপির প্রাক্তন মন্ডল সভাপতি তথা বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক তমালকান্তি গুঁইয়ের বাড়িতে ইট বৃষ্টি চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এ ব্যাপারে বিজেপি নেতার বাড়িতে হামলার সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ্যে এনেছে বিজেপি নেতৃত্ব।
এদিকে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক তমাল কান্তি গুঁইয়ের অভিযোগ, তাঁর বাড়িতে হামলা চালানোর ঘটনায় আতঙ্কের মধ্য়ে রয়েছেন তাঁরা। যদিও বিষয়টি ইতিমধ্যেই থানায় জানানো হয়েছে এবংদ্রুত পুলিশি পদক্ষেপের দাবি করেছেন তাঁরা। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘ফোনে মেরে ফেলার হুমকি একের পর এক, আমাকে শুধু নয় বুথ সভাপতি এবং অন্যান্য কর্মীদের উপরেও প্রচুর অত্যাচার হয়েছে। রাতে ঘর ভাঙচুর হয়েছে, বিজেপি করার অপরাধে।’
এর পাশাপাশি সোনামুখি বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামির অভিযোগ, ‘বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। সারা ভারতবর্ষে জুড়ে নির্বাচন হয়েছে কোথাও সন্ত্রাস নেই। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস শুরু হয়েছে।’ বিজেপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর।
যদিও বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তৃণমূল কোনও আক্রমণ করেনি। জয়ের আনন্দে বিজেপির কর্মীরা নিজেরাই এই ধরনের কাজ করেছে বলে তাঁর দাবি। পাশাপাশি, তাঁর সন্দেহ এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এই ধরনের কাজে তৃণমূল বিশ্বাসী নয়, সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তাঁর দাবি।
অন্যদিকে ভোটের ফল ঘোষণার পরেই দুর্গাপুরে পুড়ল সিপিএম পোলিং এজেন্টের বোনের দোকান। অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দুর্গাপুর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। সিপিএমের দাবি, মহিলার বাবা ও দাদা সিপিএমের পোলিং এজেন্ট হওয়ায় লাগাতার হুমকি চলছিল। মহিলা কোনও রাজনৈতিক দল না করার পরেও তাঁর সেলাইয়ের দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। যদিও শাসকদল দায় ঠেলেছে বিজেপির দিকে।
একই ছবি খোদ কলকাতাতেও। ভোটের ফলাফল বেরতেই বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতি বাহিনী। মহেশতলা, যাদবপুর, পুঁটিয়ারির মতো বিভিন্ন এলাকায় হামলার খবর এসেছে।
মঙ্গলবার মহেশতলার বিভিন্ন জায়গায় বেপরোয়া হামলা ভাঙচুর, সিপিআই(এম) দফতরে দখল চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা। এরমধ্য়ে রয়েছে সিপিআই(এম) হালতু এরিয়া কমিটির দফতরও, যেখানে ভাঙচুর চালিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী।
কারণ, হালতুর কিছু বুথে জয়ী হয়েছে সিপিআই(এম)। তাতে আক্রোশ বাড়ে তৃণমূলের। সূত্রে খবর, পার্টিকর্মীদের কয়েকজনের বাড়িতে ইট ছুঁড়েছে এই বাহিনী। মঙ্গলবার বেশ রাতের দিকে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বাইকবাহিনীকে। এদের প্রায় সবই এলাকার বাইরের। এই এলাকাতেই যাদবপুরের সিপিআই(এম) প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যের বাড়ি। সিপিআই(এম) হালতু এরিয়া কমিটির সম্পাদক মানস মজুমদার জানান, তৃণমূলের দুষ্কৃতিরা এরিয়া কমিটির দফতরে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে।
এদিকে যাদবপুরের বাঘাযতীনে পোলিং এজেন্ট খোকন দাশগুপ্তের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বাঘাযতীন স্টেশন রোডে সিপিআই(এম)’র দু’টি দপ্তরেও ভাঙচুর করে তৃণমূলের বাহিনী।
মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচনী ফলাফলের গতিপ্রকৃতি বোঝার পর থেকেই মহেশতলার বিভিন্ন জায়গায় বেপরোয়া তাণ্ডব চালায় তৃণমূলের সশস্ত্র দুষ্কৃতিরা।
এদিন সিপিআই(এম) বাটা মহেশতলা এরিয়া কমিটির অন্তর্গত হেতালখালি শাখা দফতর, চকচন্দুল জেলে পাড়া দফতর, দক্ষিণ বাংলা-২ শাখা দফতর ভাঙচুর ও দখল করে তৃণমূলিরা। মহেশতলার বাটার ক্ষুদিরাম ক্লাবেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। মহেশতলার সারদা পল্লির বাসিন্দা সিপিআই(এম) কর্মী কানু গোপাল দাস ও ডালিয়া বসুর বাড়িতে ভাঙচুর করে তৃণমূলের বাহিনী।
যাদবপুরের বাঘাযতীন স্টেশন রোডে সিপিআই(এম)’র ২টি দফতরেও ব্যাপক ভাঙচুর করে তৃণমূলের বাহিনী। বাঘাযতীনে পোলিং এজেন্ট সিপিআই(এম) কর্মী খোকন দাশগুপ্তর বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর করে তৃণমূলিরা।