হারের কারণ নিশীথ নিজেই, জানালেন উদয়ন

১৯ এপ্রিল রাজ্যের প্রথম দফার নির্বাচনের পর দেখা গিয়েছিল রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও শশী পাঁজা স্লোগান তুলেছিলেন ‘মোদির মন্ত্রী হেরে গিয়েছেন’। সেই সময় বিরোধী দলরা কটাক্ষ করে বলেছিল এগুলো তাদের চাপে রাখার কৌশল মাত্র। তবে নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার পর দেখা যায় প্রায় ৩৯ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছেন নিশীথ প্রামাণিক তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বর্মা বাসুনিয়ার কাছে। আর এই হারের সম্পূর্ণ ভাবে যিনি ‘সেনাপতিত্ব’ দিয়েছেন বলে বলা হয় তিনিই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। এই প্রসঙ্গে উদয়ন গুহ জানান, ‘ওঁকে হারাতে না পারাটা লজ্জার ব্যাপার হত আমাদের কাছে।’ একইসঙ্গে এও জানান, নিশীথের হারের দায় উনি নিজেই। তৃণমূল শুধু সেটা বুঝে কাজে লাগিয়েছে। বিজেপি সহজ ক্যাচ দিয়েছে। শুধু ধরার দায়িত্ব ছিল ওঁদের। কারণ উনি মানুষের কাছে যেতেন না।

নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে উদয়ন গুহর সম্পর্ক মোটেই মধুর নয়। ভোটের প্রচারে সময়ও তাঁদের দেখা গিয়েছিল কার্যত বিতর্ক জড়াতে। শুধু কী তাই? হাতাহাতিও জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় দুই মন্ত্রীকে। তবে পরপর দু’বার কোচবিহারের মাটি থেকে পদ্ম তুলে ফেলা কার্যত চ্যালেঞ্জ ছিল উদয়নের কাছে। কিন্তু তৃণমূল ভরসা রেখেছিল এই উদয়নের উপরেই। প্রচারে গিয়ে খোদ সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বাসুনিয়ার পাশাপাশি উদয়ন গুহর প্রশংসাও করতে শোনা যায় তাঁকে। আর দলের সেই ভরসাও রাখলেন এই রাজনীতিক। ঠিক কোন জায়গায় বল করলে উইকেট পড়তে পারে সেই হিসাব কষে ময়দানে নামালেন কর্মীদের। আর উইকেট পড়ে।’

এরই রেশ ধরে উদয়ন গুহ এও জানান, পরপর দু’বার এই গড় তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। এইবার কার্যত বাসুনিয়াকে জেতাতে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন উদয়ন ও তৃণমূল কর্মীরা। তাঁর অভিযোগ, মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই সাধারণের পাশে দাঁড়াননি নিশীথ। আর সেই বিষয়টাকেই নজরে রেখেছিলেন তাঁরা। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বুঝিয়েছেন। তথ্য মিলিয়ে দেখতে বলেন।

নিশীথের হার প্রসঙ্গে উদয়ন এও বলেন, ‘আমায় দল মন্ত্রী করেছে। আমি ঘুরব। আড্জডা মারব এটা হতে পারে না। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই আমরা ময়দানে নেমেছি। সংসদীয় রাজনীতিতে আমি মানুষের কাছে ভোট চাইব। তারপর আর যোগাযোগ রাখব না। বাড়িতে গেলে ৩ ঘণ্টা-৪ ঘণ্টা তাঁকে বসিয়ে রাখব। ইচ্ছা হলে দেখা করলাম কখনও করলাম না এই সব মানুষের মধ্যে জ্বালা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। ওকে দেখে মনে হয় অন্য গ্রহের মানুষ। মাটির থেকে উপরে উঠে নড়াচড়া করছে। নিশীথ হারের দায় উনি নিজেই।’ একইসঙ্গে এও জানান, ‘এবারও যদি আমরা নিশীথ প্রামাণিককে হারাতে না পারতাম আমার জীবিতকালে এই আসন পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় সেটা আগেই বলেছি।’

এদিন বামেদের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি উদয়ন। এক সময় বাম নেতা তথা প্রাক্তন কৃষি মন্ত্রী কমল গুহর হাত ধরে উত্তরবঙ্গে প্রসারিত হয়েছিল বাম রাজনীতি। এখন যদিও পরিস্থিতি বদলেছে। এবারের নির্বাচনে প্রচারে ঝড় তুললেও আসন সেই শূন্য। কমল পুত্র তথার রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কটাক্ষ করে বামপন্থীদের ফেরিওয়ালার সঙ্গে তুলনা করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম কোর্টে কেউ কেউ তখন ওষুধ বিক্রি করত। এরা ডুগডুগি বাজিয়ে লোক জড়ো করে। তারপর বলে ওষুধ কী কাজ করবে। বামেদের অবস্থাও ওদের মতো। ওদের কথায় লোক জড়ো হয়। ওষুধ কেউ কেনে না।’ আর এই অবস্থা হওয়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রীর ব্যাখ্য়া, ‘ওরাও ঘুরে দাঁড়াতে পারত। বিজেপি এই জায়গাটা পেত না। কিন্তু ২০১৯ সালে ওরা যদি ‘আগে রাম পরে বাম’ স্লোগানটা না দিত তাহলে হয়ত ঘুরতে পারত।’ এখানেই শেষ নয়, জোট করে নির্বাচনে লড়াও যে কাল হয়েছে সে কথা বলতে ভুললেন না তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোটা শেষ করে দিল। ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছি কংগ্রেস সাধারণের শত্রু। এখন একসঙ্গে চলার কারণ কি সেটা তো বোঝাতে হবে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two − 1 =