হেরেও মন্ত্রী হলেন যাঁরা, ব্রাত্য জয়ীরা

জয়ের পরও যাঁরা মন্ত্রিত্ব পেলেন না তাঁদের তালিকা কম দীর্ঘ নয়। তবে এঁদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মুখ হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে ৭২ জনের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য তালিকায় নেই। এঁদের কেউ আগের মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবার জায়গা পাননি। আবার কেউ চব্বিশের নির্বাচনে না জিতেও মোদির মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। রবিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও শপথ নিয়েছেন আরও ৭১ জন। এর মধ্যে ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ৫ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়েছেন শপথ। আর ৩৬ জন শপথ নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে।

এদিকে দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় অন্যতম মুখ ছিলেন অনুরাগ ঠাকুর। উনিশে মোদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিমন্ত্রী হন অনুরাগ। কিন্তু, ২০২১ সালে তাঁকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব পান তিনি। চব্বিশের নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর থেকে ফের জিতেছেন। তবে তৃতীয় মন্ত্রিসভায় আপাতত জায়গা হয়নি অনুরাগের। বিজেপি সূত্রে খবর, হিমাচল প্রদেশে থেকেই জিতে আসা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ায় অনুরাগকে বাদ পড়তে হয়েছে। জিতেও এবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন না রবিশঙ্কর প্রসাদ ও রাজীবপ্রতাপ রুডি। দীর্ঘদিনের সাংসদ রবিশঙ্কর এবারও বিহারের পটনা সাহিব থেকে জিতেছেন। তিনি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। এবার অবশ্য মোদী মন্ত্রিসভায় আপাতত নেই তিনি। অন্যদিকে রাজীবপ্রতাপ পাঁচবারের সাংসদ। বিহারের সারন কেন্দ্র থেকে পরপর তিনবার জিতলেন তিনি। তবে মোদির তৃতীয় মন্ত্রিসভায় আপাতত জায়গা পেলেন না।

মোদির প্রথম ও দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় থাকা বর্ষীয়ান নেতা পুরুষোত্তম রূপালা এবার মন্ত্রী হতে পারলেন না। গুজরাটের রাজকোট থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় থাকা নারায়ণ রানেও এবার জায়গা পেলেন না। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রানে এবার রত্নগিরি-সিন্ধুদুর্গ কেন্দ্রে জিতেছেন। একসময় শিবসেনা ও কংগ্রেসে ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। এবার অবশ্য জায়গা পেলেন না মোদির মন্ত্রিসভায়।

নির্বাচনে হেরেও মোদির মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন রাভনীত সিং বিট্টু। পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংয়ের নাতি তিনি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে কংগ্রেস থেকে রাভনীত বিজেপিতে যোগ দেন। এর আগে কংগ্রেসের টিকিটে ২ বার লুধিয়ানা থেকে সাংসদ হয়েছেন। বিজেপি তাঁকে লুধিয়ানা থেকেই প্রার্থী করেছিল। কিন্তু, পঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অমরিন্দর রাজা সিং ওয়ারিংয়ের কাছে হেরে যান রাভনীত। তারপরও মোদি মন্ত্রিসভায় তিনি জায়গা পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথও নিয়েছেন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে লোকসভা কিংবা রাজ্যসভার সদস্য হতে হবে তাঁকে। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, মন্ত্রিসভায় রাভনীতকে জায়গা দিয়ে পঞ্জাবে দলের সংগঠন আরও মজবুত করতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব।

লোকসভা কিংবা রাজ্যসভার সাংসদ না হয়েও মোদি মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন জর্জ কুরিয়েন। তিনি কেরলে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। এই প্রথম কেরল থেকে কোনও লোকসভা আসন জিতেছে বিজেপি। সেই কেরলের নেতা জর্জ কুরিয়েন সাংসদ না হয়েও মোদি মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন। প্রায় তিন দশক বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার বিভিন্ন পদ সামলেছেন কুরিয়েন। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, দক্ষিণ ভারতে দলের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে কুরিয়েনকে। আবার আগেরবার মন্ত্রিসভায় থাকা এল মুরুগান এবার নির্বাচনে হারলেও মন্ত্রী হলেন। বিজেপির তামিলনাড়ুর প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবার নীলগিরি কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন। তবে রাজ্যসভার সদস্য তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − two =