জতুগৃহ কলকাতায় ল্যাডারের সংখ্যা অপ্রতুল, রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

অ্যাক্রোপলিস মলের আগুন লাগার ঘটনায় শপিং মলের ভিতর থেকে কালো ধোঁয়া বার করতে দমকলের ৫৫ মিটার উচ্চতার ল্যাডারে চেপে কাচ ভাঙেন দমকলকর্মীরা। অথচ এই ল্যাডারটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়েছিল। বিদেশ থেকে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ল্যাডার কেনা হলেও বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওই সংস্থার সঙ্গে কোনও চুক্তি করেনি রাজ্য। ফলে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন গ্যারাজে বিকল হওয়া হাইড্রলিক ল্যাডারগুলি সারাইয়ের কাজ চলে। পুরসভা সূত্রের খবর, বিকল হওয়া ৫৫ মিটারের ল্যাডারটি সারানো হয়েছিল হাওড়ার আন্দুলের একটি গ্যারাজে।

এদিকে কলকাতা, নিউ টাউন, রাজারহাটে তৈরি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ তলার অজস্র বহুতল। শহরের সর্বোচ্চ বহুতল ‘দ্য ফর্টি টু’-র উচ্চতা ২৬৮ মিটার। অথচ বহুতলের আগুন নেভানোর জন্য দমকলের কাছে থাকা পাঁচটি ল্যাডারের উচ্চতা যথাক্রমে ৬৮, ৫৫, ৪২, ৫০ ও ৩০ মিটার। তার মধ্যে ৫০ মিটারের ল্যাডারটি বর্তমানে বিকল। ৩০ ও ৫০ মিটার উচ্চতার ল্যাডারগুলিকে দমকলের পরিভাষায় বলা হয় টার্নটেবিল ল্যাডার (টিটিএল)। এই ল্যাডারগুলির সিঁড়িতে বসে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ঘুরে উঁচু থেকে আগুন নেভানোর জন্য চারপাশে জল দিতে পারেন দমকলকর্মীরা।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার অ্যাক্রাপলিস মলে আগুন নেভানোর কাজে বেহালার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে ৫৫ মিটার এবং দমকলের সদর দফতর থেকে ৪২ মিটার উচ্চতার ল্যাডারটি গিয়েছিল। দমকলের আধিকারিকেরা পাশাপাশি এও জানান, শুক্রবার শপিং মলের আগুন নেভাতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু এই ধরনের উঁচু বহুতলে আগুন নেভাতে সুউচ্চ ল্যাডার অন্যতম ভরসা। এক দমকল আধিকারিক স্বীকার করছেন, ‘মাত্র পাঁচটি ল্যাডার দিয়ে কাজ চালানো অসম্ভব। জাপান, ফিনল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া থেকে কয়েক কোটি টাকা মূল্যে সেগুলি কেনা হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়নি। ফলে মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে পড়া ল্যাডারগুলি অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় ভাবে সারাই করাতে হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে আর এক দমকল আধিকারিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন ২০১৬ সালের একটি ঘটনার কথা। বিধাননগর ফায়ার স্টেশনে ৬৮ মিটার উচ্চতার ল্যাডারটির মহড়া চলছিল। যে পাটাতনের উপরে বসেছিলেন দমকলকর্মী, সেটি হঠাৎ উল্টে যায়। তবে ওই দমকলকর্মী সেফটি বেল্ট পরে থাকায় তিনি নীচে পড়ে যাননি। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সময়ে এমন ঘটলে বড়সড় বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে। দমকল সূত্রের খবর, ল্যাডার সংখ্যায় কম থাকায় তার মধ্যে কোনওটি বিকল হলে সমস্যা বাড়ছে। এক দমকল আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘বড়সড় আগুনে ল্যাডারের গুরুত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। কিন্তু মাত্র পাঁচটি ল্যাডারেরও কোনও না কোনওটি সব সময়ে বিকল হয়ে থাকছে।’

এই প্রসঙ্গে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু অবশ্য জানান, ‘ল্যাডার খারাপ হতেই পারে। বিকল হলে সেগুলি মেরামতও করা হচ্ছে। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 3 =