নয়া প্রযুক্তিতে এখন বহু সামগ্রীতেই ব্যবহার করা হয় সেমি কনডাক্টর। যা এককথায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ইলেক্ট্রনিক্স কোনও বস্তু তৈরিতে। এবার চোরাপথে এই সেমি কন্ডাক্টর আমদানিতে প্রায় ২১০ কোটি টাকার দুর্নীতির হদিশ পেল কলকাতার শুল্ক দফতর। এই দুর্নীতির পিছনে কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বড় চক্র রয়েছে বলে ধারণা শুল্ক দফতরের আধিকারিকদের। এদিকে শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে এই দুর্নীতিতে চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
শুল্ক দফতর সূত্রে এও জানা গিয়েছে, মূলত চিন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে সেমি কনডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী আমদানি হয় এই দেশে। কম্পিউটার থেকে শুরু করে বহু বৈদ্যুতিন যন্ত্র তৈরির জন্য এই সেমি কনডাক্টর অপরিহার্য। এই দেশে কম সংখ্যক এই বস্তুটি তৈরি হয়। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় সেমি কনডাক্টর। এই আমদানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের মোটা শুল্ক কর গুনতে হয়। শুল্ক গোয়েন্দাদের দাবি, কর ফাঁকি দিতেই চোরাপথে পাচার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সেমি কনডাক্টর। এই ব্যাপারে তদন্ত করে শুল্ক গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, বিভিন্ন জিনিসপত্রের আড়ালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে এই অতি প্রয়োজনীয় বস্তুটি। কলকাতা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই চক্রের সদস্যরা।
শুধু তাই নয়, শুল্ক দফতরের আধিকারিকদের নজরে এসেছে, চোরাপথে আসা এই সেমি কনডাক্টর রাখা হচ্ছে গোডাউনে। আবার এরই একটি অংশ কলকাতায় রেখে দিয়ে বাকিটা ফের পাচার করা হচ্ছে অন্য দেশে। এভাবে বিপুল পরিমাণ সেমি কনডাক্টর কলকাতা হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলেই শুল্ক দফতরের আধিকারিকদের।
এই প্রসঙ্গে শুল্ক দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সেমি কনডাক্টর চোরাপথে আমদানি ও পাচারে প্রায় ২১০ কোটি টাকার দুর্নীতি রয়েছে। প্রায় ১০০ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা। এই পাচারের পিছনে কয়েকজন ক্লিয়ারিং এজেন্ট রয়েছে, এমনই অভিযোগ গোয়েন্দাদের। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে সম্প্রতি শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা গ্রেফতারও করেন। গোয়েন্দাদের দাবি, এই এজেন্টরা ছাড়াও চক্রের অন্য সদস্যদের একটি বড় অংশকে ব্যাঙ্কের লেনদেনের জন্য কাজে লাগানো হয়। সারা দেশের বিভিন্ন শহর ও রাজ্যের ব্যাঙ্কের শাখায় পাচার করা হয়েছে ওই বিপুল টাকা।
এমনকী, ওই বিপুল টাকা ব্যয় করে সম্পত্তি কেনা হয়েছে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। এই দুর্নীতির ২১০ কোটি টাকা কোন কোন পথে গিয়েছে, এবার তারও তদন্ত করছেন শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, এই তথ্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকেও জানানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি বিদেশ থেকে কলকাতায় বিপুল পরিমাণ সোনা ও সুপারি পাচার নজরে এসেছে শুল্ক দফতর ও ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের। ধরপাকড়ও হয়েছে অনেক।