ফয়জানের খুনের তত্ত্ব সামনে এলেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না পাওয়া ভিডিও ফুটেজ

দু’বছর হয়ে গেলেও খড়্গপুর আইআইটি’র ছাত্র ফয়জান আহমেদের মৃত্যু রহস্যের কিনারা হল না। খুনের তত্ত্ব সামনে এলেও সেই সিদ্ধান্তে আসার পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মৃতদেহের ভিডিয়োগ্রাফি এবং ছবি। অভিযোগ, দেহ উদ্ধারের পরে এবং ময়নাতদন্তের সময়ে যে ভিডিয়ো তোলা হয়েছিল, তার একটি অংশের কোঁজ মিলছে না। এরই পাশাপাশি মৃত পড়ুয়ার ঘাড়ের ডানদিকের কানের পাশের ছবিও পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের। সেই কারণে পুরো বিষয়টি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে। এদিকে আদালত সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন পরে পড়ুয়া-মৃত্যুর মামলাটি এ বার উঠতে চলেছে হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে।

প্রসঙ্গত, ফয়জানের দেহের মোট দু’বার ময়না তদন্ত হয়েছে। প্রথমবারের রিপোর্টে সুইসাইডের ইঙ্গিত ছিল। তার প্রমাণ হিসেবে সিটের হাতে বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটও আসে। কিন্তু সেই যুক্তিতে একমত না হওয়ায় তাঁর পরিবারের তরফ থেকে খুনের অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হয়। এই ময়নাতদন্তে ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্তের রিপোর্টে ওই ছাত্রের ঘাড়ের বাঁ দিকের ক্ষত গুলির কারণেই হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এই প্রসঙ্গে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্ত জানান, ‘বাঁ দিকে গুলির দাগ থাকলেও  পিএম রিপোর্টে তাঁর কোনও রিফ্লেকশন ছিল না। ডান দিকের ঘাড়ের ছবি রাজ্যকে দিতে হবেই। ওরা বলছে, ভিডিয়োটা নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকের ভিডিয়ো থাকবে, আর অন্যদিকের থাকবে না, তা তো হতে পারে না। এই তদন্তে দু’টোই গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে মৃত ছাত্রের পরিবারের তরফে প্রথম থেকেই দাবি করা হচ্ছে, পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে ফয়জানকে। এ বিষয়ে সিট-এর রিপোর্টে কলকাতা হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হতে পারেনি। গত মাসে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নির্দেশ দেন, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্ত যা যা তথ্য এবং নথি চাইছেন, তা এক সপ্তাহের মধ্যেই দিয়ে দেওয়া হোক। প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে সিটের অফিসারদের দেখা করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ১৩ জুন মামলার শুনানি থাকলেও, তা হয়নি। পরবর্তী ক্ষেত্রে মামলাটি সরে যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। রাজ্যের তরফে আদালতকে জানানো হয়, তদন্তে পলিগ্রাফ টেস্টের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই সিএফএসএল-র ডিরেক্টরকে মাথায় রেখে একটা মেডিক্যাল টিম গড়ে দেওয়া হোক। ফয়জানের পরিবারের আইনজীবী রণজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা চাই এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। ফরেন্সিক এক্সপার্ট তাঁর রিপোর্ট আইনজীবী মারফত হাইকোর্টকে জানিয়েছেন। তাতে আত্মহত্যার তত্ত্ব নেই। গুলি করে খুনের উল্লেখ থাকায় বিচারপতি উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। চলতি সপ্তাহেই আদালতে এই মামলার যাতে দ্রুত শুনানি হয়, তার আবেদন করব।’

২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর খড়্গপুর আইআইটি-র হস্টেলে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল ফয়জান আহমেদ নামে এক পড়ুয়ার। ফয়জানের পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন, ‘যদি গুলি করেই খুন করা হয়ে থাকে, তা হলে কোথা থেকে কারা আগ্নেয়াস্ত্র এনেছিল ওই হস্টেলে?’ অভিভাবকদের দাবি, ‘ফয়জ়ান র‍্যাগিং-এর শিকার। মাঝেমধ্যে ঘরের আলো বন্ধ করে দেওয়া হতো। ফেব্রুয়ারি মাসে র‍্যাগিং করা হলে তা নিয়ে সে অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটির কাছে অভিযোগও করে। মনে হয়, হস্টেল রিপ্রেজেন্টেটিভ ইলেকশনে ভোট দিতে অস্বীকার করায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে ওকে।’

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × five =