রবীন্দ্র সরোবর দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস। সেই রবীন্দ্র সরোবরের একাংশে গত দিন পাঁচেক ধরে খোঁড়াখুড়ি চলছে বলে অভিযোগ। আর্থ মুভার দিয়ে উপড়ে ফেলা হচ্ছে মাটি। তুলে ফেলা হচ্ছে ঘাস।পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই কাজ চলছে বলে অভিযোগ। এক কথায় খাস কলকাতায় অবাধে সবুজ ধ্বংসের অভিযোগ।
এদিকে সূত্রে খবর, রবীন্দ্র সরোবরের জমির একাংশ একটি বেসরকারি ক্লাবকে লিজে দেওয়া হয়েছে। আর তা দেওয়া হয়েছে নামমাত্র আর্থিক চুক্তিতে। এরপরই রবীন্দ্র সরোবরের জমিতে এভাবে আর্থ মুভার চালিয়ে খোঁড়াখুড়ি ও সবুজ ধ্বংসের অভিযোগে প্রশ্ন উঠছে কেএমডিএ-র ভূমিকা নিয়েও। এদিকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের তরফে ২০১৭ সালে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, জাতীয় সরোবরের ভিতরে রাতে কোনও আলো জ্বালানো যাবে না। সেই কারণে রবীন্দ্র সরোবরে রাতে খেলা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। সেই জায়গায় অভিযোগ উঠছে, গত কয়েকদিন ধরে রাতে আলো জ্বালিয়ে জমিতে খোঁড়াখুড়ির কাজ চলছে। আর এই লিজ নেওয়া জমিতে মাটি খুঁড়ে, ঘাস উপড়ে ফেলে মাটি খুঁড়তে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে বড় গাছের শিকড়ও পর্যন্ত বাইরে বেরিয়ে এসেছে তাও নজরে এসেছে অনেকেরই।
এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না পরিবেশপ্রেমীরা। রবীন্দ্র সরোবর বাঁচাও আন্দোলনকারী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল ২০১৭ সালে নির্দেশ দিয়েছে রবীন্দ্র সরোবরে লাইট জ্বালানো যাবে না। সেই কারণে স্টেডিয়ামে খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাহলে কেন আবার রাত্রিবেলা সাড়ে দশটার সময় জেসিবি নিয়ে, হাই পাওয়ারের লাইট নিয়ে কাজ হচ্ছে। এতে জীববৈচিত্রের ক্ষতি হচ্ছে।’
তবে এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘ওখানে তিনটি কোচিং ক্যাম্প চলে। পিচ করা হয়। পিচের সঙ্গে প্রকৃতির কী সম্পর্ক! ওখানে প্লাস্টিক থেকে শুরু করে দুনিয়ার নোংরা পড়ে রয়েছে, ক’জন প্রকৃতি প্রেমী সেটাকে পরিষ্কার করেন? জায়গাটি ব্যবহার হলে পরিষ্কার থাকে। লেক তো শুধু গাছ লাগানোর জন্য নয়, খেলাধুলোরও তো জায়গা।’
যে সংস্থাকে রবীন্দ্র সরোবরের জমির ওই অংশ লিজ দেওয়া হয়েছে, সেই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত। যিশুর বক্তব্য, পরিবেশ আদালতের গাইডলাইন মেনেই কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জমিটা কেএমডিএ থেকে লিজ নিয়েছি। কেএমডিএ ও গ্রিন ট্রাইবুনালের যা যা নিয়ম রয়েছে, সব মেনেই আমরা কাজ করছি। ওখানে যে ঘাস রয়েছে, সেটা জংলা ঘাস। সেখানে ভাল মাঠ তৈরি করা যাবে না। সচরাচর আমরা কলকাতা শহরে দেখতে পাই না, এমন উচ্চমানের মাঠ তৈরি করা হচ্ছে। এখানে কোনও নির্মাণ হবে না। নিয়ম মেনেই কাজ হচ্ছে। দিনেও কাজ হচ্ছে, রাতেও কাজ হচ্ছে। আমরা অনুমত নিয়েই কাজ করছি।’