পুণেতে বাড়ছে জিকার সংক্রমণ, সাবধানবাণী পাঠানো হল বাংলাকে

ক্রমেই পুণেতে বাড়ছে জিকার সংক্রমণ। গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত পাঁচজনের শরীরে জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। এর মধ্যে তিনজন অন্তঃসত্ত্বাও রয়েছেন। এই নিয়ে শুধু মহারাষ্ট্রেই জিকা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১। মহারাষ্ট্রের পড়শি রাজ্য কর্নাটকের শিবামোগা জেলাতেও দু’জন জিকা আক্রান্তের খবর মিলেছে। এর মধ্যে একজন সত্তরোর্ধ্ব মারা যান শনিবার।

ফলে জিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সতর্ক করল সব রাজ্যকেও। বাংলাতেও এসেছে জিকা-সংক্রান্ত সেই গাইডলাইন। তাতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে গর্ভবতীদের সংক্রমণ প্রতিরোধে। জিকা প্রতিরোধে রাজ্যগুলির উদ্দেশে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস (ডিজিএইচএস) অতুল গোয়েলের দেওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে এই ভাইরাস থেকে বিশেষ করে গর্ভবতীদের সুরক্ষিত রাখতে হবে।

জিকা সংক্রমণ হয়েছে কি না জানতে তাঁদের প্রত্যেকের রক্ত অথবা মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। কেউ সংক্রমিত হলে তাঁর চিকিৎসার পাশাপাশি গর্ভস্থ ভ্রূণের উপরেও নজর রাখতে হবে। কেননা, মা সংক্রমিত হলে গর্ভস্থ ভ্রূণে যেমন সংক্রমণ ছড়ায়, তেমনই ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। গাইডলাইনে প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করতে বলা হয়েছে যাঁর মূল কাজই হবে হাসপাতাল চত্বরকে এডিস মশা থেকে মুক্ত রাখা এবং বাধ্যতামূলক ভাবে প্রত্যেক আসন্নপ্রসবার জিকা স্ক্রিনিং করা।

জিকা সংক্রমণ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়ার মতো জিকা ভাইরাস ছড়ায় এডিস মশা। তবে শুধু এডিস নয়, জিকা ছড়াতে পারে আরও কয়েকটি মাধ্যমে। এর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন এবং যৌন সংসর্গের বিষয় দু’টি খুবই কমন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির মতো জিকারও কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা হয় উপসর্গভিত্তিক। প্রতি পাঁচ জন জ়িকা সংক্রমিতের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে জ্বর, মাথাব্যথা, গাঁটে ব্যথা, চোখ লাল হওয়া এবং ত্বকে র‍্যাশের মতো উপসর্গ দেখা যায়। সে জন্যই জিকার উপসর্গ থাকুক বা না-থাকুক, গর্ভবতী মহিলাদের রক্ত বা মূত্রের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর এখন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে সংক্রমণ ছড়াতে সময় লাগে না বলেই বিষয়টি চিন্তার বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

২০১৬-তে গুজরাতে প্রথম জিকার প্রকোপ দেখা যায় এ দেশে। তার পর বিভিন্ন সময়ে তামিলনাড়ু, দিল্লি, কেরালা, রাজস্থান, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রেও জ়িকার সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। এ বছরেও মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে জ়িকা হামলা চালিয়েছে। তবে বাংলায় কখনও জিকার সংক্রমণ দেখা যায়নি এ যাবৎ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত জ়িকা এখানে হামলা না চালালেও রোগটি যেহেতু এডিস মশা ছড়ায় এবং সেই মশা যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে এ রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই, তাই জনস্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কতায় কোনও খামতি রাখছে না। ভেক্টর কন্ট্রোল থেকে শুরু করে পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে। আবাসিক এলাকা-সহ স্কুল, অফিস, হাসপাতাল চত্বর, নির্মীয়মান বহুতলগুলিতে মশা দমনের কাজ চলছেই। আশা, জিকা নিয়ে এই বাড়তি সতর্কতার সুফল মিলবে ডেঙ্গি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − 2 =