পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হবে না সেখানে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরাই বাহিনীর কাজ করবে, শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এমনটাই জানালেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মনোয়ন ঘিরে যে অশান্তির ছবি ধরা পড়েছে তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে শৃঙ্খলা রক্ষার কথা তোলার দাবি করা হয়েছিল বিরোধীদের তরফ থেকে। এমনকী উচ্চ আদালতের নির্দেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আনাও হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে এখনও বাহিনী আসা বাকি। আদৌ কেন্দ্র থেকে সেই পরিমাণ বাহিনী দেওযা সম্ভব কি না তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এদিকে আবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে শনিবারই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, বুথের ভিতরে থাকবে না কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। এরকমই এক প্রেক্ষিতে শনিবার এমনটাই বলতে শোনা যায় রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে। এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি এও জানান, ‘বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন রাখছে না, এটা আর আমার বলার প্রয়োজন নেই। বুথে ও ভোট গণনা কেন্দ্রে সমস্তরকমভাবে ম্যানুপুলেশানের চেষ্টা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে করা হবে। যেখানে বিজেপি শক্তিশালী সেখানে বুথে আমরাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজ করব।’
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি না এই নিয়ে যখন ভোটার মনে প্রশ্ন ঠিক সেই সময়েই প্রকাশ্যে এসেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তি। তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় টহল দেবে। নাকা চেকিংয়ের কাজে মোতায়েন থাকবে। এমনকী মানুষের আস্থা অর্জনের কাজও করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং দুই রাজ্যের সীমানা পাহারা দেওয়ার কাজেও লাগানো হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। কিন্তু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি না তার কোনও উল্লেখ নেই সেই কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে। আর তার জেরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও বুথের নিরাপত্তাতেই থাকবে না কেন্দ্রীয় বাহিনী?
এরই পাশাপাশি রাজ্য বিজেপি সভাপতি শনিবার ফের এও জানান,’আমরা পঞ্চায়েতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই, চোর মুক্ত করতে চাই।’ একইসঙ্গে, আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা, জল জীবন প্রকল্পের মতো বিষয়গুলিতেও জোর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এই একই কথা রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে উল্লেখ করা হয়েছিল তাদের ইস্তেহার অর্থাৎ ‘সংকল্পপত্র’ প্রকাশের সময়ও।
তবে এদিনের ‘মিট দ্য প্রেস’ রাম-বাম জোট বা কংগ্রেসরে সঙ্গে জোটের কথাও খারিজ করেন তিনি। কারণ, এই নীতি সংগঠনের উপরের তলার নেতারা মানেন না। তার প্রধান কারণ হল, বিজেপি এবং বাম বা কংগ্রেসের নীতির ফারাক। আদতে এরা রাজনৈতিক দিক থেকে একেবারে বিপরীতে যেহেতু অবস্থান করছে সেইহেতু জোট হওয়া অসম্ভব হলেই জানান তিনি। তবে পাশাপাশি এও বলেন, পঞ্চায়েতের মতো নীচু তলায় এই জোট হলে সেখানে তাঁরা হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচন ভীষণ রকমই ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাচন। সুতরাং একটি পঞ্চায়েতে কাকে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের মানুষেরা পছন্দ করবেন সেটা ঠিক করেন স্থানীয়রাই।
তবে তৃণমূলের তরফ থেকে বারবার যে দাবিটা করা হয় তা হল বাংলার প্রাপ্য় অর্থ দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। সেই প্রসঙ্গে এদিন মুখ খুলতে দেখা যায় বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে। এদিনের ‘মিট দ্য প্রেস’ থেকে তিনি জানান, সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে। তবে ১০০ দিনের কাজের টাকা বা আবাস যোজনার টাকা যে আটকে রয়েছে এদিন তা স্বীার করে নেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। আর এই টাকা আটকে রয়েছে বেশ কিছু আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এই দুটি প্রকল্প থেকে ওঠার পরই। আর এদিনের এই সাংবাদিক বৈঠক থেকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি এও জানান, রাজ্যে সিএএ হলেও এনআরসি চালু হওয়ার কথা ঘোষণাই করা হয়নি কেন্দ্রের তরফ থেকে। আর এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই বলেও আশ্বাস দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি।