কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভ না কি জাতিদাঙ্গায় উত্তপ্ত ফ্রান্স, নাহেলের মৃত্যু ঘিরে উঠেছে প্রশ্ন

কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভ না কি জাতিদাঙ্গায় উত্তপ্ত ফ্রান্স, এই প্রশ্নই উঠছে পুলিশের গুলিতে নাহেল নামে এক নাবালকের মৃত্যু নিয়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদে টানা চারদিন অগ্নিগর্ভ ফ্রান্স। প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। তারই জেরে প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত, ২০০০-এর বেশি গাড়ি পুড়িয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নাহেল আসলে কে তা নিয়েও।

নাহেল ফ্রান্সের ন্যান্তেরে শহরতলির বাসিন্দা। শনিবারই নাহেলকে কবর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন সেখানকার মেয়র। তবে এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয় নাহেলের পদবি নিয়েও। পরিবারের তরফেও কিছু বলা হয়নি এবিষয়ে। গত তিন বছর ধরে ডেলিভারি ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন এই নাহেল। ইলকেট্রিক মিস্ত্রি হওয়ার ইচ্ছে ছিল নাহেলের। অ্যাডমিশন নিয়েছিলেন বাড়ির থেকে দূরে সুরেসনেশের একটি কলেজে। তবে কলেজে উপস্থিতির হার খুব একটা ভাল ছিল না নাহেলের। নাহেলের মায়ের নাম মৌনিয়া। মৌনিয়ার একমাত্র সন্তান এই নাহেল। মৌনিয়ার দাবি, নাহেলের মুখের সঙ্গে আরবিদের মুখে মিল রয়েছে। সেই কারণেই পুলিশ তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলেছে। মৌনিয়ার এই মন্তব্য যেমন একদিকে কৃষ্ণাঙ্গ বিতর্কের ঝড় বাড়িয়ে তুলেছে, অন্যদিকে জাত ও ধর্ম নিয়েও দাঙ্গা বেধেছে কি না তাও নিয়েও উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ফ্র্যান্সের ন্যান্তেরে অঞ্চলে ট্রাফিক আইন অমান্য করার ১৭ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ নাবালক নাহেলকে গুলি করে পুলিশ। পথ চলতি এক ব্যক্তি গোটা ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করেন। তাতে দেখা যায়, নাহেলের গাড়ি থামিয়ে দুই পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাতে রয়েছে একটি পিস্তল। হঠাৎই ওই পুলিশ অফিসার নাহেলকে গুলি করেন। মৃত্যু হয় নাহেলের। ঘটনার পুলিশ যুক্তি দেখায়, আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালানো হয়েছে। এরপরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। চার দিন কেটে গেলেও অশান্তি থামার কোনও লক্ষ্মণ নেই। ‘দ্য পুলিশ কিলস’ স্লোগান তুলে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ফ্রান্সে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশি-রক্তচক্ষুর সামনে পড়তে হয় সংখ্যালঘুদের। নির্যাতনের শিকার হতে হয়। একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে কম আয়সম্পন্ন বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষ পুলিশি রোষের শিকার হন। জাতি বিদ্বেষের বিতর্কও নতুন নয় সেদেশে। নাহেলের মৃত্যু পুরনো বিতর্কে উস্কে দিয়েছে। ফের মাথাচাড়া দিয়েছে দাঙ্গা। উল্লেখ্য, ফ্রান্সে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। নাগরিকদের ফ্রান্সে এই মুহূর্তে না যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 12 =