উৎকলার উদ্য়োগ ৭ দিন ধরে পালিত হল মহাসমারোহে ওড়িশা উৎসব

খিদিরপুরের নর্দার্ন পার্কে জগন্নাথ সেবা সমিতির সাংস্কৃতিক শাখা উৎকলা রথাযাত্রাকে কেন্দ্র করে  ৭ দিনের এক ওড়িশা উৎসবের আয়োজন করে। এই উৎসবের পরতে পরতে তুলে ধরা হয় ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিকে। প্রাণবন্ত বহু প্রতীক্ষিত এই অনুষ্ঠান সফলভাবে শেষ হল দুই পড়শি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক শিকড়ের মেলবন্ধনে।
সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিচার করলে কলকাতা বঙ্গ সংস্কৃতি এক পীঠভূমি। আর এই সাংস্কৃতিক ল্যান্ডমার্কে পরিণত হওয়া কলকাতাতেই এই উৎসবের উদ্বোধন করেন ইসকন-এর প্রভু নেতাই দাস। উদ্বোধনের পর থেকেই  পরবর্তী দিনগুলিতে এক সাংস্কৃতিক সুর তৈরি করে ঐতিহ্যবাহী শিল্প, সঙ্গীত এবং নৃত্যের মধ্য দিয়ে।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন। এই অনুষ্ঠানে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় রাজ্যের তরফ থেকে ছৌ নৃত্য এবং ওড়িশি নৃত্য প্রদর্শিত হয়।

এই বছরের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওড়িশি নৃত্যশিল্পী সঞ্চিতা ভট্টাচার্যের নৃত্য থিয়েটার পারফরম্যান্স ‘দ্য দ্রৌপদী ফেনোমেনন’। তাঁর এই উপস্থাপনায় ফুটে ওঠে আবেগ এবং ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ। যা মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। আধ্যাত্মিক উদ্দীপনা যোগ করে, সন্ধ্যায় বিখ্যাত ভজন সম্রাট, পদ্মশ্রী অনুপ জালোটার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ভজন সন্ধ্যায়। এই ভজন সন্ধ্যায় তাঁর ভক্তিমূলক গানের হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনা ঐশ্বরিক প্রশান্তির এক পরিবেশ তৈরি করে, যা শ্রোতাদের ভগবান জগন্নাথের আধ্যাত্মিক সত্তার সাথে নিবিড়ভাবে এক যোগসূত্র ঘটায়।
পুরো উৎসব জুড়ে, পুরী জগন্নাথ মন্দিরের পবিত্র নৈবেদ্যকে প্রতিফলিত করে ভক্তদের মহাপ্রসাদও পরিবেশন করা হয়।

উৎসবটি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্পৃক্ততার উপরও জোর দেয়। শিশুদের জন্য একটি অঙ্কন প্রতিযোগিতা তরুণ প্রতিভা এবং সৃজনশীলতা প্রদর্শন করে, অন্যদিকে মহিলাদের জন্য খিরি পিঠার এক ঐতিহ্যবাহী রন্ধন দক্ষতার ওপরেও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। কলকাতায় ওড়িশা উৎসব কেবল একটি অনুষ্ঠান-ই নয়, এটি সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং মানব চেতনার উদযাপনও বটে। এটি বিভিন্ন পটভূমির মানুষকে একত্রিত করে, একাত্মতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। উৎসবটি উভয় রাজ্যের সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে সবার সামনে তুলে ধরে এক আলোকবর্তিকার মতোই দাঁড়িয়ে উভয়ের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে প্রচার করে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 11 =