রাজ্যের নানা জায়গায় সামনে আসছে মহিলা নিগ্রহের ঘটনা। এলাকার মাতব্বরেরাই হাতে তুলে নিচ্ছেন শাসনক্ষমতা। এমনই ঘটনা ঘটছে সোনারপুরেও। যেখানে এলাকার শাসনক্ষমতা হাতে তুলে নিয়েছেন জামালউদ্দিন সর্দার। তাঁর বিরুদ্ধে এবার মুখ খুলছেন একের পর এক স্থানীয় মহিলাই। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন এই জামালউদ্দিন নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচয় দেন। সম্প্রতি এক মহিলাকে শিকলে বেঁধে তাঁকে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল এই জামালউদ্দিনের বিরুদ্ধে। এবার এই জামালের বিরুদ্ধে রুবিজান বিবি নামে আরও এক গৃহবধূকে মুখ খুলতে দেখা গেল। তাঁর অভিযোগ, স্বামী শাহরুখ শেখকে শিকলের সাহায্যে উল্টো করে ঝুলিয়ে সারারাত মারধর করেছে এই জামাল। তাঁকে বাঁচাতে হাত-পা ধরলেও রেহাই মেলেনি। যদিও, জামালউদ্দিনের সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও যোগ নেই বলে জানিয়েছেন সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লাভলি মৈত্র।
রুবিজান জানান, ‘আমাদের পারিবারিক ঝামেলা হচ্ছিল। আমার মামা শ্বশুর ওকে জানাতেই আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। ওকে শিকল দিয়ে উল্টো করে টাঙিয়ে মারধর করে।’ এই ঘটনায় স্থানীয় বিধায়ক লাভলি জানান, ‘ঘটনা যে ঘটিয়েছে তার শাস্তি চাই। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। উনি নিজেই বলছেন। তবে ওনার অভিযোগ জামাল অত্যাচার করেছে। শিকলে বেঁধে মারধর করা হয়েছে। জামাল পলাতক। ওর খোঁজ চলছে। তবে এই ব্যক্তি তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ নন। প্রশাসনিক কোনও পদেই নেই।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার প্রথম সোনারপুরের জামালের কথা প্রকাশ্যে আসে। সেখানে রশিদা বিবি নামে এক মহিলা অভিযোগ করেন তাঁর ছেলেকে বেধড়ক মেরেছে এই জামাল। অত্যাচার থেকে ছাড় পাননি রশিদা বিবিও। এই ঘটনা জানাজানি হতেই মঙ্গলবার সোনারপুরে যান বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। আবার রাতে ওই মহিলার বাড়ি যান সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লাভলি মৈত্র। রশিদা বিবি এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানান, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। সঙ্গে এও জানান, তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু বিচার পাননি। সেই কারণেই তিনি বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এই বিষয়ে সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক লাভলি মৈত্র জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কেন সাহায্য করেনি তার দলীয়ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। এরই রেশ টেনে রশিদা জানান, ‘আমরা রাজনীতি চাই না। জামাল আমার ছেলেকে মেরেছে। সহদেব নামে পার্টির সদস্যকে বলেছি। কিন্তু উনি কোনও পদক্ষেপ করছিলেন না। বিধায়ক এখন সাহস দিয়ে গিয়েছেন।’
এ দিকে, যে জামালের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে আপাতত সে পলাতক। তার সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে বলে সোনারপুর থানা সূত্রে খবর।
এদিকে এই জামালের নামে ত্রস্ত সোনারপুরবাসী। আয় বলতে কিছু নেই। তবে একাংশের দাবি, জমি প্রোমোটিং, ফেরাজি জমি বিক্রি করা, বিচার পাইয়ে দেওয়ার নামে তোলাবাজি এবং জমি বিক্রি এইসব করেই নাকি পেট চলে তাঁর। সোনারপুর এলাকায় পা রাখলে একদম রাস্তার উপরেই নজরে আসবে জামালউদ্দিনের পেল্লাই সাইজের বাড়ি। মাঝে ঝা চকচকে সরু রাস্তা আর দু’ধারে সবুজ গালিচা। দেখে বোঝা দায়, এটা রিসর্ট না কারও বাড়ি। তিনতলা বাড়িটি হলুদ-নীল রঙ করা। চারদিক মোড়া কাচে। রয়েছে উঁচু পাঁচিলও। ভিতরে কিন্তু একটি বাড়ি নয়। আরও একটি বাড়ির অংশ রয়েছে। বাড়ির ভিতর ও বাইরে মিলিয়ে মোট ৫০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। বাড়ির মধ্যে থাকা সুইমিংপুলে চড়ে বেড়াচ্ছে কচ্ছপ। তবে কচ্ছপ রাখা বেআইনি হলেও জামাল সর্দার বাড়িতে কীভাবে কচ্ছপ রেখেছেন তা নিয়েও উঠছে বড়সড় প্রশ্ন।
জামালের রয়েছে একটি ঘোড়াও। এই সাধের ঘোড়াকে দেখাশোনা করতে ১০হাজার টাকা দিয়ে রাখা ছিল একটি লোক। নাম শাহজাহান মল্লিক। আরও ৭জন রয়েছেন যাঁরা পরিচারিকার কাজ করেন।