নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক শাসকদলের নেতানেত্রীকে তলব করছে ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অন্যদিকে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে হিংসার বিস্তর অভিযোগের মধ্যেই উত্তরবঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এমনই এক প্রেক্ষিতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্রের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ রাজ্যপালের। সূত্রে খবর, ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য সঞ্চারী রায় মুখোপাধ্যায়কে এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। ওমপ্রকাশের মেয়াদ থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ থেকে বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, সব বিষয়েই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল।
প্রসঙ্গত, এই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেপ্তার হন স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। এরপরই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক ওমপ্রকাশকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য করে শিক্ষা দপ্তর। ওমপ্রকাশের মেয়াদকালেও বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগই তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল। এই প্রসঙ্গে ওমপ্রকাশ মিশ্র অবশ্য জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে শুনলাম। আমি যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু কোথায় দুর্নীতি বা বেনিয়ম হয়েছে তাঁর উল্লেখ নেই। রাজ্যের নামী শিক্ষাবিদদের নিয়ে সোমবার আমি একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছি। এই কথা প্রকাশ্যে আসার পরই আমার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল।’ এখানে বলে রাখা শ্রেয়, দীর্ঘদিন কংগ্রেস করলেও কিছু বছর আগে তৃণমূলে যোগ দেন ওমপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর, তাঁকে সেই অর্থে সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘রাজ্যপাল এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে এই কাজ করছেন। উনি সংবিধানের কোনও রীতিনীতি মানছেন না। বিজেপি নির্দেশে রাজ্যপালের চেয়ার ব্যবহার করে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন। রাজ্য সরকারে বিব্রত করার চেষ্টা করছেন। এটা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়।’
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় শিক্ষা দপ্তর। রাজ্যপাল নিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতে ধাক্কার মুখে পড়তে হয় রাজ্যকে। অবিলম্বে উপাচার্যদের বেতন ও নিয়ম অনুযায়ী যাবতীয় সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
এরপরই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস নিয়ে একের পর এক কড়া মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে রাজ্যপালকে। এমনকী তিনি বিভিন্ন জেলার সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় গিয়ে আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে নিয়েও কড়া মন্তব্য করেন তিনি। ফলে আগামী দিনে নবান্ন-রাজভবন সংঘাত কোন দিকে যায় সেটাই দেখার।