দিল্লির মসনদে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা কিছুদিনের অতিথিঃ অখিলেশ

তৃণমূল কংগ্রেসের একুশে জুলাই-এর মতো হাইভোল্টেজ সমাবেশে উপস্থিত থাকতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবকে। রবিবার বিমানবন্দর থেকে অখিলেশ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান। সেখান থেকে সভাস্থলে একসঙ্গে যান দু’‌জনে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ার পর রবিবার এই মঞ্চ থেকেই অখিলেশ বার্তা দিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। শহিদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন অখিলেশ যাদব। বিরোধী শিবিরের দুই বড় শরিক আগামী দিনে যে হাত ধরাধরি করেই চলবে সে বার্তাই দেওয়া হয় এই একুশের মঞ্চ থেকেই।

এদিন অখিলেশ যাদব বলেন, ‘দিদির কাছে এমন কর্মী আছেন, যাঁরা প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। এমন সমর্থক থাকা যে কোনও দলের কাছেই ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ যে কোনও রাজনৈতিক দলের ভিত্তি কর্মীরাই।’ একইসঙ্গে অখিলেশ এদিন এও বলেন, ‘‌আমরা, আপনারা নেতিবাচক রাজনীতি করি না। ইতিবাচক রাজনীতি করি। মানুষের জীবনে বদল আসবে শীঘ্রই। আমাদের একজোট হতে হবে। বদল আনতে হবে। কর্মীদের বলতে চাই, আপনাদের নেতা অনেক বড় নেতা। তিনি লড়াই করে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই দলকে এখানে পৌঁছেছেন। আরও দূরে যেতে হবে। আপনারা পাশে থাকবেন। আগামী লড়াইয়ে আমরাও আপনাদের পাশে থাকব।’‌

একুশের বিধানসভা ভোটে প্রচারের সময় পায়ে চোট পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুলে এনে অখিলেশ যাদব বলেন, ‘দিদি যখন পায়ে প্লাস্টার নিয়েও প্রচার করছিলেন, তখনই বলেছিলাম দিদি একাই লড়ে জিতবেন।’ এদিন ২১-এর মঞ্চে মমতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অখিলেশ। তিনি বলেন, ‘খুব কম নেতা আছেন, যাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করেন। দেশের রাজনীতিতে দিল্লির শাসকদল সাম্প্রদায়িক অশান্তির ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আপনাদের সমর্থনে দিদি যে কোনও লড়াইয়ে প্রস্তুত।’

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি যেমন আসন হারিয়েছে, ঠিক তেমনই প্রবল ধাক্কা খেয়েছে উত্তরপ্রদেশেও। সেই প্রসঙ্গ তুলে এদিন অখিলেশ যাদব বলেন, ‘বাংলার মানুষ বিজেপিকে হারিয়েছে, উত্তরপ্রদেশও সঙ্গে রয়েছে। দিল্লির সরকার অল্প দিনের অতিথি। এই সরকার খুব তাড়াতাড়ি পড়ে যাবে।’ এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, কেন্দ্রের সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে না তা আগেও বলেছিলেন অখিলেশ। এদিন কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেও একই কথা শোনা গেল অখিলেশের গলায়। তাঁর কথায়, ‘‌যাঁরা কিছুদিনের জন্য মসনদ দখল করেছে, তারা আর কিছুদিনেরই অতিথি। যারা দিল্লিতে সরকার গড়েছে, তাঁদের সরকার ভেঙে পড়বে। আপনাদের আমাদের জন্য খুশির খবর আসতে চলেছে। এই সরকার বেশিদিন টিকবে না। দিল্লির এই ভীতু সরকার, দুর্নীতির সরকার শীঘ্রই পড়ে যাবে। দেশ জেগে উঠেছে। এই ধরণের নেতিবাচক শক্তির অবসান ঘটাবেন তাঁরা।’

এদিন বক্তব্য রাখার সময় শুরুতেই অখিলেশ যাদবকে ধন্যবাদ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘মুম্বইয়ে আপনার সঙ্গে কথা হয়েছিল। একবার বলতেই আপনার মেনে নিয়েছিলেন। আমি চাই বাংলার সঙ্গে গোটা দেশের সম্পর্ক ভাল হোক। অখিলেশের মাধ্যমে যার সূচনা হল। উত্তরপ্রদেশে যে খেলা অখিলেশ দেখিয়েছেন, তাতে বিজেপির ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল। দিল্লিতে ভয় দেখিয়ে যে সরকার তৈরি হয়েছে, তার আয়ু বেশিদিন নেই।’

অখিলেশের বক্তব্যের শুরুর আগে বক্তব্য রাখেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‌গোটা দেশে বিজেপির যে পরাজয় হয়েছে, সেটার কৃতিত্ব দু’‌জনের। এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই, অখিলেশ যাদব।’‌ অখিলেশ যাদব মঞ্চে এসে অভিষেকের সঙ্গে করমর্দন করেন। তারপর তাঁর বক্তব্য, ‘‌দিল্লিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মানুষের ভাল চান না। এরা অন্যের প্রাণ নেন, কিন্তু দেন না। তা ধরে রাখার জন্য শহিদ ধার নেন। অন্যদের মহাপুরুষকে নিজেদের বলে দাবি করেন।’ এই প্রসঙ্গে অখিলেশ এও বলেন ‘এরা অন্যদের থেকে মহাপুরুষকেও ধার করে। কারণ এদের কাছে গুরুদেব বা নেতাজির মতো মহাপুরুষ নেই। দেশ, সংবিধানকে বাঁচাতে আমাদের একসঙ্গে লড়াই করতে হবে: অখিলেশ। আগামীদিনে যে লড়াই হতে চলেছে, আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব।’ সঙ্গে অখিলেশের সংযোজন, যখন জনতা জেগে ওঠে তখন তাদের মিথ্যা প্রচার ধাক্কা খায়। তাই দিল্লির সরকার শীঘ্রই পড়ে যাবে। যারা দিল্লিতে বসে আছে তারা বারাবার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আপনারা দিদির পাশে থাকলে এই লড়াইয়ে জয় হবেই।’‌

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 6 =